শিরোনাম
আবাসিক এলাকায় গোডাউন ভাড়া দিলে জানমালের ক্ষতি হতে পারে। দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যাল থেকে ঘটতে পারে ভয়ানক দুর্ঘটনা। এমন সব আশঙ্কার কথা জেনেও রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশন নামের চারতলা ভবনটিতে অধিক লাভের আশায় গোডাউন ভাড়া দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই ভবনের গোডাউনে লাগা ভয়াবহ আগুনে পুড়ে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় করা মামলায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ভবনের মালিক দুই সহোদর মোহাম্মদ হাসান সুলতান ও হোসেন সুলতানসহ আটজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪/৪৩৬/৪২৭/৩৪ ধারায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভবন মালিকসহ আটজনের হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আগামী ২৩ মার্চ মামলার চার্জশিট গ্রহণের বিষয় শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। চার্জশিটে সাক্ষী করা হয়েছে ১৬৭ জনকে।
চার্জশিটভুক্ত মামলার অন্য আসামিরা হলেন রাসায়নিক গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল ইকবাল, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতিক, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ।
তিন বছর আগের ওই ঘটনায় আসিফ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা চকবাজার মডেল থানায় ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলেসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা তাদের চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্লোর দাহ্য পদার্থের গোডাউন হিসেবে ভাড়া দেন। দাহ্য পদার্থের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
মামলার চার্জশিট নিয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জন নিহতের ঘটনায় করা মামলায় ভবনের মালিক দুই সহোদর মোহাম্মদ হাসান সুলতান ও হোসেন সুলতানসহ আটজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০৪/৪৩৬/৪২৭/৩৪ ধারায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তিসহ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন নিশ্চিত হয়, সে দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি খুন নয় এমন শাস্তিযোগ্য নরহত্যা করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজীবন কারাদণ্ডে অথবা ১০ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে, যদি যে কার্যটি কর্তৃক মৃত্যু হয়, সে কার্যটি মৃত্যু সংঘটনের উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়। অথবা এমন দৈহিক জখম করার উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়, যে দৈহিক জখমের দরুন মৃত্যু ঘটতে পারে। অথবা ১০ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবে, যদি যে কার্যটি কর্তৃক মৃত্যু অনুষ্ঠিত হয়, সে কার্যটি সম্পাদনের দরুন মৃত্যু অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা থাকে, অথচ কার্যটি মৃত্যু সংঘটনের উদ্দেশ্যে করা হয় নাই যে দৈহিক জখম করার কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে।
দণ্ডবিধির ৪৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি সচরাচর উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত বা মানুষের বসবাসের স্থান বা সম্পত্তি হেফাজতের স্থানরূপে ব্যবহৃত হয় এমন কোনো গৃহ ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে বা অনুরূপ ধ্বংস করতে পারেন জেনে অগ্নি বা কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্যে অনিষ্ট সাধন করেন তাহলে তিনি ১০ বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধি ৪২৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষতি সাধন করে এবং তদ্বারা পঞ্চাশ টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ অর্থের অনিষ্ট করে তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ