শিরোনাম
ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে যে ১০ জনের নাম পাঠানো হবে তা প্রকাশের বিষয়ে সার্চ কমিটি সিদ্ধান্তহীনতায় আছে। কমিটির কেউ বলছেন, প্রকাশ করা উচিত হবে না। কারও মতে, সংশ্লিষ্টদের মত নিয়ে প্রকাশ করার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে সার্চ কমিটির তিন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে গণমাধ্যমের। কিন্তু তাদের কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। এদিকে বাছাইকৃত ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সুপ্রিমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে কমিটির সপ্তম বৈঠকের সময় নির্ধারিত আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সার্চ কমিটির সদস্য ও সিএজি মুসলিম চৌধুরী বলেন, নাম প্রকাশের বিষয়টি কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত জানানো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সার্চ কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, নতুন প্রণীত আইন অনুযায়ী নাম প্রকাশের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কমিটি রাজনৈতিক দল বা নাগরিকদের কাছে নাম না চাইলেও পারত। এরপরও নাম চাওয়া হয়েছে এবং তা প্রকাশও করা হয়। এতে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে। কেউ প্রশংসা করেছেন, কেউ কেউ সমালোচনাও করছেন।
তাই পরবর্তী পর্যায়ে নাম প্রকাশ করা ঠিক হবে কিনা সে বিষয়ে সার্চ কমিটির মধ্যে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া কমিটি যেহেতু বলেছে, চূড়ান্ত তালিকা করার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা নাম দেননি তারা নাম দিতে পারবেন। যদি তেমন নাম জমা পড়ে সেটা গ্রহণ করবে সার্চ কমিটি।
অপর এক সদস্য যুক্তি দিয়ে বলেন, যারা সব পর্যায়ে নাম প্রকাশ চাচ্ছেন তারা যেন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনটি ভালোভাবে পড়ে দেখেন। সার্চ কমিটি সেই আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করছে। অহেতুক সমালোচনা করলে হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত তালিকায় যাদের নাম আসবে তাদের সবাইকে যদি কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হতো তাহলে নাম প্রকাশ করতে সমস্যা ছিল না। যেহেতু অন্তত অর্ধেক নাম বাদ পড়ে যাবে সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন মনে করেন কিনা সেই বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। কমিটির পক্ষ থেকে আহ্বান করা হলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, পেশাজীবী সংগঠন নাম জমা দেয়। এছাড়া বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলাপ করেও নাম পাওয়া গেছে।
সব মিলে তিন শতাধিক নাম পেয়েছে সার্চ কমিটি। এর মধ্য থেকে অর্ধেকের বেশি অযোগ্য তালিকায় পড়ে গেছে। যোগ্যদের মধ্যেও প্রাথমিক একটি বাছাই হয়েছে। যার চূড়ান্ত রূপ দাঁড়াতে পারে শনিবারের বৈঠকে। সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করার সুযোগ আছে।
নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রণীত নতুন আইন অনুযায়ী, সার্চ কমিটি প্রত্যেকটি শূন্যপদের বিপরীতে দুটি করে নাম প্রস্তাব করতে পারবে। সে অনুযায়ী সর্বোচ্চ দশটি নাম প্রস্তাবের সুযোগ আছে সার্চ কমিটির।
সূত্রটি জানায়, গত বুধবারের বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যাওয়া সব অফিসারকে সার্চ কমিটির বাছাই প্রক্রিয়ায় রাখা হয়নি। শুধু এক-দুজন অফিসার সার্চ কমিটিকে সহযোগিতা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে বাছাইকৃত নামের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অন্য তথ্য-তালাশের কাজও হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কী ধরনের তথ্য চাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সূত্র জানায়, যাদের নাম বাছাইয়ে এসেছে তাদের বেশিরভাগই জাতীয়ভাবে পরিচিত মুখ। তাদের অতীত কর্মক্ষেত্র ভালোভাবে জানা হলেও বর্তমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাবিত নাম প্রকাশের জন্য ফের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনে সার্চ কমিটিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলেছে। কমিটি প্রথম তালিকা প্রকাশ করে কিছুটা স্বচ্ছতা দেখিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী পদক্ষেপগুলোতে সেটা না থাকলে পুরোপুরি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে না। তিনি বলেন, সুবিধামতো স্বচ্ছতা দেখালে হবে না। মানুষ যেন সার্চ কমিটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারে তারা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে কাজ করছেন।
সূত্র: যুগান্তর