শিরোনাম
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বইমেলায় অভিজিৎ রায়ের ওপর হামলার নায়ক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রধান মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়া এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ের পর জঙ্গিদের ক্ষিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক। রায়ের পর আমরাও জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে, বিশেষ করে এই বইমেলার নিরাপত্তাব্যবস্থা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বইমেলা ঘিরে অভিজিৎ রায়কে হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিদের তৎপরতা দেখা গেছে। এবারের বইমেলা উপলক্ষে কোনো হুমকি রয়েছে কি-না জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ের পর জঙ্গিদের ক্ষিপ্ত হওয়া স্বাভাবিক। রায়ের পর আমরাও জঙ্গি তৎপরতার বিষয়ে, বিশেষ করে এই বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। তাদের নেতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া এখনও বাইরে। তাই আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। তাকে গ্রেফতারে দেশে-বিদেশে পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। আমরাও চেষ্টা করছি।
মেলায় নজরদারি সাপেক্ষেও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বই পাওয়া যায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মেলায় প্রতিবছর কিছু আপত্তিকর বই বের হয়ে আসে। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রতিদিন বের হওয়া এতো বই মনিটরিং করা কষ্টসাধ্য। তাই এবার বাংলা একাডেমির লিটল ম্যাগ চত্বরে সিটি এসবি থেকে সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তারা বইয়ের বিষয়টি নজরদারি করবেন। মেলা বন্ধের পরে গভীর রাতে যদি এমন কোনো বই মেলায় ঢুকানো হয় তাহলে এর দায়-দায়িত্ব ওই স্টলের মালিক ও প্রকাশককে নিতে হবে।
বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, মেলাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি শহীদ মিনার কেন্দ্রিক ও শাহবাগ-নীলক্ষেত কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশে তল্লাশি দল থাকবে, সন্দেহজন কিছু দেখলে তারা তল্লাশি করবেন। মূল মেলা প্রাঙ্গনে প্রবেশের আগে প্রতিটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। এছাড়া, কাউকে সন্দেহ হলে তাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে তল্লাশি করা হবে।
মেলা প্রাঙ্গনসহ আশেপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গনে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক পোশাকধারী সদস্যও মোতায়েন থাকবে।
মেলার আশেপাশে মোটরসাইকেল ও গাড়ি টহল থাকবে। এছাড়া, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, মেলায় মেডিক্যাল টিম ও ফায়ার সার্ভিস মোতায়েন থাকবে। ডিএমপি কন্ট্রোল রুমের ভোতরে ব্রেস্ট ফিডিং কক্ষ থাকবে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত মেলা প্রাঙ্গনে আসবেন ও নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন।
মেলায় সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরিধান করতে হবে। প্রবেশপথে তামপাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকবে, মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। স্টলের কর্মীরা টিকা দিয়েছেন মর্মে কার্ড রাখতে হবে, অন্যথায় তাদেরকে মেলায় থাকতে দেওয়া হবে না।
যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রাণের মেলা নির্বিঘ্নে শেষ করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আশা করছি সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে পারবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বলেন, নিম্নমানের এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বই প্রকাশ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিছু বই আছে রাতের অন্ধকারে মেলায় ঢুকে। আমি প্রস্তাব করেছি একটা গেট দিয়ে বইগুলো ঢুকবে, সেখানে আমাদের সার্ভিলেন্স টিম থাকবে। তাহলে এটা ঠেকানো সম্ভব।
সূত্র: জাগো নিউজ