ভরা মৌসুমে সবজির দাম এত বেশি কেন, প্রশ্ন কৃষিমন্ত্রীর

ফানাম নিউজ
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৩০

পর্যাপ্ত উৎপাদনের পরও শীতের এই ভরা মৌসুমে সবজির দাম এত বেশি কেন- এমন প্রশ্ন তুলেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এই সময় সবজির দাম কেন এত, একটা লাউ, একটা ফুলকপির দাম এত বেশি কেন? উৎপাদন তো কম হয়নি, এমন না যে, আবহাওয়া খারাপ ছিল। অবশ্য প্রথম দিকে সবজি লাগানোর পরে বৃষ্টির কারণে তা নষ্ট হয়েছে, এটাও বিবেচনায় নিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্নড হ্যামলার্সের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

উৎপাদন ও মজুত পর্যাপ্ত হওয়ার পরও চাল, সবজিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বেশি, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো উৎপাদন বাড়ানো। আমি মনে করি, না ফুলকপির উৎপাদন কম হয়েছে। সারা পৃথিবীতে করোনার কারণে একটু মূল্যস্ফীতি হয়েছে। কন্টেইনার ভাড়া আগে যেটা ছিল, তার চেয়ে বেড়েছে। এখানে ট্রাকের ভাড়াও বেড়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতির ওপর বিরাট একটা প্রভাব পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সারে আমরা সাবসিডি দিচ্ছি। কিন্তু কত দিচ্ছি? আগে যেটা ৯ হাজার কোটি ছিল, এখন সেটা দিতে হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা। গম, আড়াইশো ডলারের বেশি কোনোদিনও প্রতি টনের দাম ছিল না, এটা এখন সাড়ে চারশো ডলার। সার্বিকভাবে শিপিং কস্ট বা অন্য পণ্যের দাম যদি কমে না আসে কৃষিপণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। এ বছর কিন্তু পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক আছে। আলুর দাম বেশ কম। কিন্তু শাক-সবজি দাম...মানুষের মুদ্রাস্ফীতির একটি প্রভাব আছে। এ কারণেই সব কিছুর দাম বাড়ার প্রভাব কৃষিপণ্যের উপরেও পড়েছে। চাষিরা যদিও খুশি, বেশি দামে বিক্রি করে।’

খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ কি না, জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকার ব্যর্থ হবে কেন? ২০ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। সরকারের গুদামে কোনো দিন ২০ লাখ টন চাল মজুত ছিল না। দুঃখজনকভাবে সারা পৃথিবীতে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তার একটি প্রভাব দেশেও পড়ছে।’

সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তখনই সিন্ডিকেট হয়, যখন সাপ্লাই কম হয়। গতকাল নওগাঁ-কুষ্টিয়ায় ফুড কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে, মোটা চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু সরু চালের ঘাটতি রয়েছে। এখন আমরা কী করবো? আমরা তো সামনে প্রোগ্রাম নিচ্ছি, হাইব্রিড জাতের চাষ আরও বাড়াবো। চালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল তো হতে পারবো না। সরু চালের উৎপাদন কম। আমাকে এমন উৎপাদন করতে হবে, যাতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি।’

চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি করা যায় কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু চাল আমদানি করলে তো নিয়ন্ত্রণ হবেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো করতে দিচ্ছেন না। আমদানি করলে হয়তো দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু উনি বলছেন, আমি তো ১০ টাকা দরে চাল দিচ্ছি, অতি দরিদ্রদের জন্য। আমি ভিজিএফ, ওএমএসে চাল দিচ্ছি। গরিব মানুষের তো কোনো সমস্যা নেই। ধনীরা যারা চাল খেতে চান, দাম দিয়ে খান। আমার চাষিদেরও তো দাম পেতে হবে। সরু চালের দামটাই বেশি, মোটা চালের দাম কমতির দিকে। এটাই আমাদের লক্ষ্য যাতে গরিব মানুষের কষ্ট না হয়।’

এর আগে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘চালের দাম বাড়ছে। আমি অবশ্য বলবো যে মোটা চালের দাম বাড়ছে না। দু-এক টাকা কমেছে গত কয়েক দিনে। সরু চালের দাম বাড়ার দিকে। সরু চালের দিকে মানুষের ঝোঁক মারাত্মক। সবাই এখন সরু চাল খেতে চায়। মোটা চাল মানুষ বিক্রি করে দেয় গরুর খাবার, পশুর খাবারের হিসেবে। এটা একটা সমস্যা।’

ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টরের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী জানান, ইফাদ আমাদের খুব ভাল উন্নয়ন অংশীদার। কৃষিখাতের উন্নয়নে তারা খুব সহজ শর্তে, কম সুদে ঋণ দেয়। বর্তমানে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলে ফসল উৎপাদনে কাজ চলমান আছে। এখানে সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর বাংলাদেশে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, উপকূলে লবণাক্ত এলাকায় ফসল উৎপাদন, কৃষিপণ্যের ভ্যালু অ্যাড ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে বলেও জানান মন্ত্রী।

সূত্র: জাগো নিউজ