শিরোনাম
সমবয়সী তিন বন্ধু—রফিক, রাসেল ও নাইম। তিন জনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। ঢাকার উপকণ্ঠ চন্দ্রায় থাকতো তারা। কেউ করতো চাকরি, কেউ চালাতো দোকান। আড্ডা দিতে দিতে এক পর্যায়ে নেশার অন্ধকার জগতে ঢুকে পড়ে তিন জনই। নিয়মিত গাঁজা আর ইয়াবা সেবন করতো একসঙ্গে। সেই নেশার টাকা যোগাতে তিন জনই যোগ দেয় ডাকাত দলে। সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-মানিকগঞ্জ সড়কে চালানো অভিযানে অন্য সহযোগীদের সঙ্গে এই তিন জনও ধরা পড়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের কাছে। তিন দিনের রিমান্ডে তারা জানিয়েছে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ার নেপথ্যের কারণ ও কিছু ঘটনা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, ‘রফিক, রাসেল ও নাইম পেশাদার ডাকাত চক্রের সদস্য। নিয়মিত মাদক সেবন করতো। মাদকের টাকা যোগাড় করতেই তারা ডাকাতি শুরু করে। এদের মধ্যে রফিককে বছরখানেক আগে বাস-ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার করেছিলাম। জামিনে বের হয়ে সে আবারও শুরু করে ডাকাতি।’
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কে বাসে ডাকাতির একাধিক চক্রের মোট ১৬ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন পালিয়ে আছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
গ্রেফতারকৃত রফিক জানায়, তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানাধীন চর গাজুরিয়ায়। ৬-৭ বছর আগে চন্দ্রা এলাকায় কাজ করতে এসে রাসেল ও নাইমের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর তারা বন্ধু হয়ে যায়। একসঙ্গে প্রথমে গাঁজা ও পরে ইয়াবা সেবন শুরু করে। এর মধ্যে সুমন নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা ডাকাতিতে যোগ দেয়। বাস ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে ডাকাতি করে বেড়াতো ওরা। যা পেতো তা দিয়ে চলতো মাদক সেবন।
রফিক আরও জানায়, বছরখানেক আগে সে একটি ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতি করতে গিয়ে ঢাকা মাহনগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। জামিনে বের হয়ে গ্রামে ফিরে যায়। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে সুমনের ডাক পেলে চন্দ্রায় এসে বাসে ডাকাতি করে আবার গ্রামে ফিরে যেত।
রফিকের ভাষ্য, গত ১৪ জানুয়ারি সুমন তাকে ‘একটি কাজ আছে’ বলে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা আসতে বলে। সুমনের কথামতো সে এলেঙ্গা গিয়ে পূর্ব পরিচিত ডাকাত নেতা জাকির, শাহীন, রাসেল, নাইমসহ ৮-১০ জনকে পায়। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বগুড়া থেকে ঢাকাগামী সোনারতরী পরিবহনের একটি বাসে ওঠে। বাসে উঠেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা ও মূলব্যান জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। পরে নির্জন রাস্তায় এক এক করে হাত ও মুখ বেঁধে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে যায়।
রফিক জানায়, বাসটি নিয়ে তারা বাইপাইল ঘুরে আবারও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর যায়। সেখানে ঝিনাইদহগামী একটি ট্রাক আটকে চালক ও সহযোগীকে বাসে তুলে ট্রাকটি নিজেদের দখলে নেয়। ট্রাকটিতে মেঘনা গ্রুপের সয়াবিন তেল ছিল।
গ্রেফতারকৃত রাসেল জানায়, জাকির, শাহীন ও সে ট্রাকে ওঠে। প্রথমে চন্দ্রার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় যায় তারা। সেখান থেকে ট্রাক নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যায়। কিন্তু তেল বিক্রি করতে না পেরে ট্রাক ফেলে চলে আসে তারা।
রাসেল আরও জানায়, সে একসময় চন্দ্রার বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায় চুক্তিভিত্তিক কাজ করতো। নাইম তার এলাকার বন্ধু। একসঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এরপর জাকির ও সুমনের কথায় ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
গ্রেফতারকৃত নাইম জানায়, সে চন্দ্রায় একটি চায়ের দোকান চালাতো। কিন্তু নেশায় পড়ে দোকানের পুঁজি হারায়। পরে রফিকসহ একটি হোটেলে কাজ শুরু করে। এর মধ্যেই সুমন ও জাকিরের মাধ্যমে তারা তিন জন ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
নাইমের ভাষ্য, ১৪ জানুয়ারি ডাকাতির পর দলনেতা তাকে এক হাজার টাকা দিয়েছিল। এছাড়া গ্রেফতারের আগে জাকিরের সঙ্গে তাদের চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামে এক ব্যক্তির কাছে সবসময় নগদ তিন-চার লাখ টাকা থাকার তথ্য ছিল তাদের কাছে। তারা চট্টগ্রামে গিয়ে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে আনার জন্য একটি প্রাইভেটকারও ভাড়া করেছিল।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন জানান, চক্রের সদস্যরা বাসে ডাকাতির পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইও করতো। গ্রেফতারকৃত রফিকের নামে আগের ডাকাতি মামলার পাশাপাশি মাদকের মামলাও আছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন