শিরোনাম
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাবে আইন ও সংবিধান অনুসারে দায়িত্ব পালন করার প্রত্যয় জানিয়েছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আপিল বিভাগের এই বিচারপতিকে সভাপতি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাবে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের অনুমোদনের পর আজ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘জাতির পক্ষে রাষ্ট্রপতির দেওয়া দায়িত্ব আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব। কমিটির অপর সদস্যদের নিয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসব। রোববার বিকেল বা সোমবারও হতে পারে।’ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করেন তিনি।
সদ্য পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, গঠিত এই অনুসন্ধান কমিটির অপর পাঁচ সদস্য হলেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী (পদাধিকার বলে), সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন (পদাধিকারবলে) এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের প্রতিটি পদের জন্য ২ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ পাঁচজনকে দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো আইনানুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করার সুযোগ আছে। রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছ থেকে নাম চাওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, প্রথমে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। এটি একক কোনো সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। এটি নির্ভর করবে কমিটির সব সদস্যের ওপর। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। ইসি গঠনে নতুন আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে হবে। এ বিষয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, কমিটির সব সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। তবে আইনে ১৫ কার্যদিবসের কথা রয়েছে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যেই নাম প্রস্তাব করা হবে।
অনুসন্ধান কমিটির বৈঠক কোথায় হবে, জানতে চাইলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, অতীতে সার্চ কমিটির বৈঠকগুলো জাজেস লাউঞ্জেই হয়েছে। কেননা, কমিটির প্রধান একজন বিচারপতি ছিলেন। তাই জাজেস লাউঞ্জেই হবে।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ২০০৯ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। দুই বছর পর ২০১১ সালের ৬ জুন হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের অনুসন্ধান কমিটিরও সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানার হাটনাইয়া (ছয়াশী) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সন্মান) ও স্নাতকোত্তর (অর্থনীতি) এবং এলএলবি ডিগ্রি লাভের পর আইন পেশায় নিয়োজিত হন। ১৯৮৬ সালে জেলা আদালত, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামে বইও লিখেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
সূত্র: প্রথম আলো