র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাখ্যা চেয়েছে সরকার

ফানাম নিউজ
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৫০
আপডেট  : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:৫১

র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ। এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপ্তি কতটা, সেটাও বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নিজ দপ্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের পদক্ষেপ, লবিস্ট ও বিদেশি আইনি পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের পরিকল্পনা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়েও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

গত ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকে এ বিষয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকারের কী পদক্ষেপ—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর অন্য কোথাও কোনো ধরনের প্রভাব নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এটি বিস্তৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক উড়ো খবর বেরিয়েছে যে আরও কিছু ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে, সেটি তিনি নাকচ করে দেন।

র‌্যাবের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাটা সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে অভিহিত করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘র‌্যাব আমাদের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের অনেক সফলতার ভাগীদার র‌্যাব। তাদের (র‌্যাব) এবং তাদের কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সেই জায়গা থেকে আইনি বিষয়গুলো দেখছি। কয়েক দিন ধরে বিস্তারিতভাবে কিছু বিষয়ে বৈঠক করেছি।’

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আইনি বিষয়েও কথা বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল ধারণা ছিল যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। পরে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটা শুরু করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।

ইতিমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলেও উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘কী কী কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং রাজস্ব বিভাগ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং এর ব্যাপ্তি কতটা, তা আমরা লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, তাঁরা উত্তর দেবেন। তবে সময় নেবেন। আপনারা জানেন যে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হলে অভিযোগকারী পক্ষের যুক্তিগুলো লিখিত আকারে লাগবে, যাতে সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করা যায়। আমরা সেই প্রথম ধাপে আছি। এ পর্যন্ত আমাদের সামনে বিকল্পগুলো কী কী, তা নিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ, সেটিই আমরা বেছে নেব।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব সংলাপ এবং কাছাকাছি সময়ে বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিটি আলোচনায় মানবাধিকার নতুন প্রসঙ্গ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।

নিষেধাজ্ঞার অনেক আগে থেকেই র‌্যাবের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি ছিল। র‌্যাবকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অভিযোগও আছে। এসব অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। আমলে নিলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, রাজনৈতিকভাবে র‌্যাবকে ব্যবহারের অভিযোগটা হাস্যকর, তা টেকনাফের ঘটনা প্রমাণ করে। যে ভদ্রলোকের কথা বলা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। একাধিক ব্যক্তি আওয়ামী লীগ করতেন এবং মাদকসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ধরতে গিয়ে র‌্যাব বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এটা মোটেই সত্যি নয় যে র‌্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে বিরোধী দলকে দমনের জন্য।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা বিভিন্ন দেশের ও ফোরামের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে। জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় অভিযোগগুলো এলে সেখানে তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়। পাল্টা যুক্তিও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কখনো সফল হই, কখনো সফল হই না। তার মানে কিন্তু এই না যে তারা এক সপ্তাহ বা পরের মাসে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেবে। এটা প্রথমবারের মতো হলো। খুবই দুঃখজনক হলেও এটা আমরা এখনো বলব, সম্পর্ক যতই গভীর বন্ধুতার হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটা মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।’

বাংলাদেশের অংশীদার হিসেবে র‌্যাব গঠনের সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে। র‌্যাবের কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রশ্ন থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা সমাধান করা যেত বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, র‌্যাবের জন্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা বিভিন্ন সরঞ্জাম সচল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া সেগুলো চলবে না।

লবিস্ট নিয়োগে অগ্রাধিকার

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের পরিকল্পনার কথাও জানান শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে যুক্ততার জন্য আরও কোনো পদক্ষেপের দরকার হয় কি না, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। বিদেশি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পাশাপাশি কিছু মানুষ লাগবে। যদি করি (লবিস্ট নিয়োগ), অবৈধ টাকা ব্যবহার করে লুকিয়ে সেটা করব না। বিএনপির মতো কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা থাকবে না। আওয়ামী লীগের মতাদর্শ প্রচারের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করা হবে না। দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত করার জন্য বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে কাজটি করা হবে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বড় সুফলভোগী কে?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) প্রয়োগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আপত্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা জানতে চান, ডিএসএর সবচেয়ে বড় সুফলভোগী কে বলুন তো? তিনি বলেন, ‘ডিএসএর সবচেয়ে বড় সুফলভোগী হলো গ্রামের তরুণী বা মেয়েরা, যারা স্কুল কিংবা কলেজে যায়। যখন কারও সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়, এরপর তাকে ফাঁদে ফেলে যে পুরুষ বা ছেলেটি তার ক্ষতি করেছে, সেখানে একমাত্র ভরসার জায়গা ডিএসএ। এখন কয়েকটি জায়গায় ভুলবশত বা বাড়াবাড়ি করে হোক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে ভুল হচ্ছে, তা নিয়ে আইনমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন। আমরা এটা সুরাহার বিষয়ে উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে অঙ্গীকার করেছি।’

ভবিষ্যতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অপপ্রয়োগ বন্ধের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, আইনমন্ত্রী সেদিন কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ডিএসএ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যেই তো সবচেয়ে বড় ভয়। তাদের আত্মবিশ্বাস জোগানোর জন্য বলা হয়েছে, কোনো সাংবাদিককে ডিএসএর আওতায় গ্রেপ্তারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা কমিটির কাছে জানাতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো