শিরোনাম
‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি)।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে ২৩ জানুয়ারি ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি প্যারেডে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দৃষ্টিনন্দন প্যারেড পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পাঁচদিনব্যাপী (২৩-২৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশ সপ্তাহকে ঘিরে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপে বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়।
প্রথমদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেন।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, যা আমাদের এ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনাদের পূর্বসূরিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতাকে সব আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, জনবান্ধব পুলিশিংয়ের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।’
করোনার কারণে ২০২১ সালে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্যকে পদক দেওয়া হয়।
পদকের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা।
পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয়দিন (২৪ জানুয়ারি) কল্যাণকর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য ৭৪২ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ (আইজিপি ব্যাজ) দেওয়া হয়। প্রশংসনীয় ও ভালো কাজের জন্য দেওয়া এ ব্যাজ পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার।
২০২০ সালে ভালো কাজের জন্য পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল সমমর্যাদার ৪০১ জনকে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘এফ’—এ ছয় ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ব্যাজ দেওয়া হয়। ২০২১ সালে অবদানের জন্য ব্যাজ পান ৩৪১ পুলিশ।
এদিন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শিল্ড প্যারেড, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ সদস্যদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ কোনো অন্যায়-অপকর্মের মাধ্যমে সংবাদ হতে চায় না আমাদের ভালো কাজের মাধ্যমে সংবাদের বিষয়বস্তু হতে হবে।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশ হওয়া কোনো পেশা না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সেবা দেওয়া। সেজন্য আমরা আমাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে ট্যাগলাইন রেখেছি- ‘চাকরি নয়, সেবা।’ যাদের মধ্যে সৎ, সাহসী এবং দেশপ্রেম এ তিনটি গুণ আছে, তাদের জন্য পুলিশবাহিনী উন্মুক্ত। আসুন আমরা দেশ মাতৃকার সেবা করি।
পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ এর দ্বিতীয় দিন রাতের অধিবেশনে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের মতবিনিময় সভা রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি দেওয়া এক ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সেবাপ্রার্থীরা যেন কোনোমতেই হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে পুলিশ সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণ মানুষ বিপদে পড়লে আইনি সেবা নিতে পুলিশের কাছে যায়। আপনারা তাদের সমস্যা এবং অভিযোগগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনবেন এবং তাদের (বিপন্ন ব্যক্তিদের) আন্তরিকভাবে আইনি পরিষেবা দিতে দ্বিধা করবেন না।
পুলিশ সপ্তাহ-২০২২-এর চতুর্থ দিনে বুধবার দিনব্যাপী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্মেলনের আয়োজন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মতো পুলিশকে উপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এরই অংশ হিসেবে পুলিশে সংযুক্ত হচ্ছে রোবটের ব্যবহার, ড্রোন ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি। এজন্য ডাটা ফিউশন টেকনোলজির মাধ্যমে নানা অপরাধ ও অপরাধীর তথ্য সন্নিবেশিত করা হবে।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সভায় সুনির্দিষ্ট ২৪টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও উঠে আসা বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নতুন উইং বা ইউনিট গঠন, পদসৃজন, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, নতুন সার্ভিস চালু, চিকিৎসা সংক্রান্ত, পুলিশ ওয়েলফেয়ার ও ভাতা, পরিবহন সংক্রান্ত, সক্ষমতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, আবাসন, পদায়ন, পদক ও সম্মাননা, পুলিশের পোশাক, পেনশন ও অবসর সংক্রান্ত বিষয়, ছুটি ইত্যাদি।
আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ সপ্তাহের শেষদিন। এদিনে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে দুটি অনুষ্ঠান রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। প্রথমটি রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সম্মেলন এবং দ্বিতীয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবদের সম্মেলন।
সূত্র: জাগো নিউজ