প্রকল্প দেরি হওয়ায় বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১:১৪

একনেক সভায় গতকাল মঙ্গলবার পাস হওয়া ১০টি প্রকল্পের মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পই ছিল সংশোধনী প্রকল্প। এসব সংশোধনী প্রকল্পের অনুমোদন দিতে গিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন।

এ সময় মন্ত্রী ও সচিবরা এনইসি সম্মেলনকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বারবার প্রকল্প সংশোধন করা হয়। আজকে একনেক সভায় ১০টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়, এর মধ্যে পাঁচটিই সংশোধিত। ’ এভাবে বারবার সংশোধিত প্রকল্প একনেক সভায় আসছে বলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। দেরি হলে প্রকল্পের ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি জনগণও সঠিক সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

সভায় প্রধানমন্ত্রী পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সিলেট অঞ্চলে নানা কারণে অনেক জমি পতিত পড়ে আছে। জমিগুলো যেন ব্যবহার করা হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। আমি সিলেটবাসীকে তাঁর অভিপ্রায় জানিয়ে দেব। ’

একনেক সভায় ৭২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, বিদেশে সার উৎপাদন করতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে পারবে। বিদেশে উৎপাদিত সেই সার বাংলাদেশের চাহিদা মেটাবে। উদ্যোক্তারা চাইলে বাইরের দেশেও ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে গ্যাসের সংকট কমবে এবং বিদেশে বিনিয়োগও বাড়বে। তবে দেশের স্বার্থ যেন আগে রক্ষা করা হয়, সেই বিষয়টি উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত করতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাওরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, হাওরে যেখানে ছোট সেতু দরকার, সেখানে তা করতে হবে। যেন ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারে। নৌকা চলাচলে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন না হয়। ‘ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রজেক্টের (সিএসএডাব্লিউএমপি) আওতায় সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়নও করা হবে।’ প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় সিলেট হাওরের কথা উঠে আসে।

একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন : গতকাল চার হাজার ৬২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় একনেক সভায়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার ৫৫ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য এক হাজার ৫৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—নেত্রকোনা-বিশিউড়া-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক প্রকল্প (প্রথম সংশোধনী), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধনী), ১৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধনী), শেখ হাসিনা সেনানিবাস বরিশাল স্থাপন প্রকল্প (প্রথম সংশোধনী), ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধনী), ফ্লাড অ্যান্ড রিভারব্যাংক ইরিশন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রগ্রাম প্রকল্প, ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (ইউএফ-৮৫) প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প, গোপালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, রংপুর, জামালপুর ও যশোর জেলায় বিটাকের ছয়টি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প।

একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভায় অংশ নেন।

সূত্র: কালের কণ্ঠ