শিরোনাম
তিন বছর বাংলাদেশে কাজ করার পর ফিরে গেলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার। ২০১৮ সালের ২৩ আগস্ট সিনেট হিয়ারিংয়ে আর্ল মিলার বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েকটি মিশনের বিষয়ে উল্লেখ করেন। এরমধ্যে ছিল—স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক, সন্ত্রাসবাদ দমন, নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতা। তবে কোভিড মহামারির কারণে তার সব মিশন পুরোপুরি সফল হয়নি।
দীর্ঘ চাকরি জীবনের ২৪ বছর ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি সার্ভিসের স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে কর্মরত থাকা মিলার বাংলাদেশে তিন বছর থাকলেও এরমধ্যে দুই বছরই ছিল করোনার মহামারি। এতে ব্যাহত হয় তার স্বাভাবিক কার্যক্রম। সেই হিসেবে বলা যায়, আংশিক সফল হয়েছে মিলারের মিশন ঢাকা।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে আর্ল মিলারের ঢাকা ইনিংস ভালোই ছিল। ইন্দো-প্যাসিফিক, বাণিজ্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওই সময়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এসেই মিলার আমার সঙ্গে দেখা করেন। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বড় ক্যানভাসে প্রথম থেকেই আমরা কাজ করেছি। পরেও তা অব্যাহত ছিল।’
মিলারের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক উষ্ণ ও পেশাদার ছিল জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘আরও অনেক কিছু করার ছিল। অনেক সফরের সম্ভাবনাও ছিল। কোভিডের কারণে করা যায়নি।’
উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা থাকতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, এরপর মার্শা বার্নিকাট থাকতে জন কেরি ঢাকায় এলেও মিলারের সময় শুধু ডেপুটি সেক্রেটারি স্টিফেন বিগান ২০২০ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফর করেন।
শহীদুল হক বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিকে নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। যা আমাদের একে অপরকে বুঝতে সহায়তা করেছে। ওই সময়ে কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির হার অব্যাহত ছিল।’
সন্ত্রাসবাদ দমনে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অনেক বেশি জোরালো হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি অর্থ যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
শহীদুল হক বলেন, নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ অনেক আগে থেকেই আছে। মিলারের সময়ে বিষয়টি কোভিডের কারণে বেশি দূর এগোতে পারেনি।
আর্ল মিলার চলে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান এবং অনুরোধ করেন তাকে যে সাহায্য ও সহযোগিতা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেছে সেটি যেন নতুন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকেও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমিও তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছি বর্তমান ট্রাফিকিং ইন পারসন রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো করতে তার বিশেষ অবদানের জন্য।’
উল্লেখ্য, মার্কিন ট্রাফিকিং ইন পারসন রিপোর্টে বাংলাদেশ কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ওয়াচ লিস্টে ছিল। কিন্তু গত বছর সবার ঐকান্তিক চেষ্টায় ওয়াচ লিস্ট থেকে বের হয়েছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কোভিডে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ছে এবং রাষ্ট্রদূত আমাকে জানিয়েছেন যে আরও কয়েক মিলিয়ন টিকা যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে দেবে।
বছরের শেষভাগে র্যাব ও এর বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্ল মিলারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন