আন্তরিকভাবে কাজ করুন, দেশের উন্নয়ন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ১৬ মে ২০২৩, ০৩:২২

গত ১৪ বছর ধরে দেশের অব্যাহত উন্নয়নের ধারা কোনোভাবেই যেন ব্যাহত না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে বিসিএস ক্যাডারের নতুন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনাদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, গত ১৪ বছর ধরে আমরা দেশের যে উন্নয়ন করেছি, তা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।

সোমবার (১৫ মে) রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১২৭তম, ১২৮তম ও ১২৯ তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি নবীন অফিসারদের ১৪ বছর আগের বাংলাদেশের অবস্থা কল্পনা করতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা ও ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার এবং অন্যান্য খাতে বাংলাদেশ কি পরিবর্তিত হয়নি? বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে।

বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময়ে দেশে ৯ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল এবং দেশ স্থিতিশীলতার সঙ্গে আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

তিনি বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি আবারও দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

তিনি বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশে পরিণত করতে সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ কাজ আরও তরান্বিত করতে নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা সর্বদা জনগণের সেবা করতে বাধ্য। তাই, আমি চাই আপনারা (নতুন কর্মকর্তারা) জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করুন।

পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেকে কখনোই প্রধানমন্ত্রী ভাবি না। আমি নিজেকে জনগণের সেবক মনে করি। তাদের সেবা করাই আমার একমাত্র দায়িত্ব।

তিনি নতুন কর্মকর্তাদের তৃণমূলে গিয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জয় বাংলা (১২৭তম), রঙিন বাংলাদেশ (১২৮তম) ও গর্বিত বাংলাদেশ (১২৯তম) শীর্ষক তিনটি স্মারক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন একটি গবেষণাপত্রের মোড়ক উন্মোচণ করেন।

শেখ হাসিনা বিসিএস কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে বলেন, যাতে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পেতে পারে ও সামাজিক হুমকি থেকে দূরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, মানুষ যেন মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে পারে তা নিশ্চিত করুন। কারণ, এসব হুমকি সমাজ ও পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। আপনাদের এ বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা উচিত।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। তাই, তিনি অপচয়ও বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে কঠোরতা বজায় রাখতে হবে। আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে যেন আমরা আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারি।

নতুন কর্মকর্তাদের ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ বলেন, এ কর্মকর্তারা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেবেন।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৪ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সরকার দেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আনতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রা ২৯ বছর (১৯৭৫-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৮) সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি কর্মকর্তাদের তাদের সব স্তরের কাজে সততা বজায় রাখতে এবং দেশ ও জনগণকে ভালোবাসতে বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সবসময় সততা, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে চলতে হবে। আপনাদের দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের ভুলে গেলে চলবে না যে, তাদের বেতন-ভাতা আসে দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গণমানুষের পকেট থেকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব বেতন-ভাতা আসে সেই টাকা থেকে, যা দেশের জনগণের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়। তাই, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সবার কর্তব্য। এ বিষয়টি আপনাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে।

তিনি নবীন অফিসারদের উদ্দেশে জানান, মানুষের সেবা করা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ হওয়া উচিত।

শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু যে কতটা সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা জানতে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ১৯৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর লেখা বইয়ের ভলিউম পড়ার জন্য নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি পড়ারও আহ্বান জানান।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ হচ্ছে জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করা।

জনগণকে উন্নত জীবন দেওয়ার উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়ার জন্য আশ্রায়ণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আবাসন প্রকল্প ও টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করা এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতে দুস্থ মানুষকে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে করেন, যাতে করে বাংলাদেশে কোনো খাদ্য সংকট দেখা দিতে না পারে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মমিনুর রশিদ আমিন বক্তব্য রাখেন। এসময় বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।