শিরোনাম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক পাওয়ার ৫০ বছর পূর্তি আগামী ২৩ মে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক অর্জন ও সম্মান লাভের বিষয়টিকে উৎসবের আমেজে সারাদেশে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ওইদিন জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন। আলোচনা সভার পর হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর এ পদক যে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে, সে বিষয়টি প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে তুলে ধরতে বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।
২৩ মে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন হবে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হবে আলোচনা অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশি মিশন ও দূতাবাসগুলোতেও আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।
দিনটি দেশব্যাপী উদযাপনের জন্য গত ৯ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। সেই সভায় আলোচনার পর বিভিন্ন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সিনিয়র সচিবদের নেতৃত্বে আটটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে মানবতার কল্যাণে এবং শান্তির পক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে শান্তিপদকে ভূষিত করে আসছে। নোবেল বিজয়ী ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডেরিক জুলিও কুরির নামানুসারে বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫৯ সাল থেকে এ পদকের নামকরণ করে ‘জুলিও কুরি’ পদক। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোয় অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় ১৪০টি দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপটে তাকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক দেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছিলেন। ওই পরিষদ সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশীয় শান্তি সম্মেলনের এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশচন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক প্রদান করেন। ওই অনুষ্ঠানে রমেশচন্দ্র বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার নন, তিনি বিশ্বের এবং তিনি বিশ্ববন্ধু’।
স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্রনেতার এটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পদক লাভ এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারপ্রধানকে বিশ্বশান্তি পরিষদের শান্তি পদক প্রদান ছিল বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার নিরলস প্রচেষ্টা, তার কর্ম, রাজনৈতিক দর্শন ও প্রজ্ঞার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এ অর্জন বিশ্বসভায় বঙ্গবন্ধুকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছিল এবং উজ্জ্বল করেছিল বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সেলিনা পারভেজ বলেন, আগামী ২৩ মে বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদক পাওয়ার ৫০ বছর পূর্তি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবের আমেজে উদযাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি, সেখানে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওইদিন জাতীয় পর্যায়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভাটি হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে নানা ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। অনেকগুলো উপ-কমিটি করা হয়েছে। আমরা ফলোআপ মিটিংও করছি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়ভাবে আলোচনা সভার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এজন্য সাংস্কৃতিক সচিবকে আহ্বায়ক করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির অর্জন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করার বিষয়টি ব্যাপক প্রচারের জন্য পুস্তিকা/পকেট বই প্রকাশ করা হবে। এ সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারের জন্য ৫ মিনিটের একটি এবং ৩০ সেকেন্ডের একটিসহ মোট দুটি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করা হবে। বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ছবি সংবলিত স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করা হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশব্যাপী আয়োজিত সব অনুষ্ঠানের জন্য একই ডিজাইনের লোগো ও ব্যানার তৈরি করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন/দূতাবাসে আলোচনা সভা, ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ মোনাজাত এবং প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
এছাড়া দিনটি উদযাপন উপলক্ষে দেশব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে বলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।