শিরোনাম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্মরণ করে জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, উনি (কৃষিমন্ত্রীর) দায়িত্ব দিয়েছিলেন, এখন এই দেশে যদি খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বা ইতিহাস লেখা হয়, তাহলে এক কোনা দিয়ে হলেও মতিয়া চৌধুরীর নাম একটু হলেও লেখা থাকবে। এই সুযোগ শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ দেন নাই।
সোমবার (১০ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে উত্থাপন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
১৯৯৬ থেকে ২০০৯ এই সময়ে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন মতিয়া চৌধুরী। এর আগে ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিল। সেই কথা উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, যখন আওয়ামী লীগের অফিসে টেলিফোন লাইন ও বিদ্যুৎ ছিল না, তখন আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি।
মতিয়া চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপের) নেতা হন। সবশেষ যোগ দেন আওয়ামী লীগে।
সেই কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তখন রাজনৈতিক সহকর্মীরা বিবৃতি দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন ক্ষমতার লোভে মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কোথায় ক্ষমতা? কোথায় আওয়ামী লীগ? তখন কার্যালয়ে টেলিফোন কানেকশান ছিল না! সাজেদা আপা আসতেন, ফোন করার দরকার হলে নিচে বাটার দোকানে গিয়ে কল করতে হতো। আর বিদ্যুৎ ছিল না বলে উনি পাঁচ টাকা দিতেন, আমাদের পিয়ন গিয়ে চারটা হারিকেন ভরে তেল নিয়ে আসতেন। খুচরা পয়সা ফেরত দিলে সাজেদা আপা পিয়নকে বলতেন- তুই চা খাইস। সেদিন আমার বিরুদ্ধে এক বিবৃতি দিয়ে কামান দাগা হলো।
তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি (১০ ডিসেম্বর হবে) যখন যোগদান করি, তখন আওয়ামী লীগের অত্যন্ত... বলতে গেলে নম্বর ওয়ান নেতা এসে বললেন, মতিয়া চৌধুরী এই পার্টিতে জয়েন কইরেন না। এই পার্টি আপনি করতে পারবেন না। আমি নামটা নাই বলি... ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম পাঁচটার সময় যোগদানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গেছে। এখন বাজে ৩টা ৩৫। তাকে ভাই বলে সম্বোধন করে বললাম, আপনি চিন্তা কইরেন না, আমি আওয়ামী লীগ অফিস ঝাড়ু দেবো। কোনোদিন পদপদবী চাইবো না।
মতিয়া চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, যদি সত্যিকারের নেতা হইতেন, আমার এই কথারে ধরে রাইখা... যখন ৮১টা সম্মেলন হলো, আমি ৭৯টায় যোগদান করেছিলাম। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পার হয়ে গেছে, শেখ হাসিনার অবর্তমানে যখন কমিটি হলো আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির একটা সদস্য পর্যন্ত রাখা হয়নি। ৮৬’তে যখন সম্মেলন হলো, তখন আমি শেখ হাসিনার হাত ধরে কৃষি সম্পাদক হই। উনি কৃষি সম্পাদক হিসেবে যে মর্যাদা দিয়েছিলেন। সরকার গঠন হলো, কৃষির জন্য আমি সুযোগ-সুবিধা জনগণের জন্য বিলিয়ে দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মতিয়া চৌধুরী বলেন, ৬ দফা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় জেলখানায়। আমি মনে করি বিধাতার ইচ্ছা, জেলখানায় অনেকেই গেছেন, কলমও পর্যন্ত নিতে দেয় না। সবকিছু জেলগেটে জমা দিতে হয়। আমি সবকিছু জমা দিচ্ছি, এটা জেলার লিখছিলেন। এই সময় পেছন থেকে একটা আশ্বস্তের হাত। আমি চমকে পেছনে ফিরে তাকাতে দেখলাম বঙ্গবন্ধু। সেদিন তার দেখা ছিল। সেই হাত দিয়ে উনি একটা কথাই বললেন- মতিয়া ভয় পাইয়ো না। বঙ্গবন্ধু আজকে আসমানের কোনো স্তরে আছেন আমি জানি না। তার উদ্দেশে শুধু বলতে চাই, আমি ভয় পাইনি। ভয় পাবো না। চিত্ত যেতা ভয় শূন্য, উচ্চ যেতা শির। যেটা আপনি বলতেন। মাথা উঁচু করে যাতে মরতে পারি এই দোয়াটুকু করবেন।