সারের চাহিদা সাড়ে ৬৮ লাখ টন, বাড়বে না দাম

ফানাম নিউজ
  ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২৭

আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর সারের দাম বাড়ানো হবে না।

সোমবার (৩ এপ্রিল) সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী সারের দাম এক টাকাও বাড়াননি। অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার আমাদের ওপর চাপ দিচ্ছে যে, সারের দাম বাড়ান, আমরা অর্থ যোগাড় করতে পারছি না, আমরা অর্থ আপনাদের দিতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনড়, কিছুতেই তিনি সারের দাম বাড়াবেন না।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ পরিপ্রেক্ষিতে আজকেও আমরা আলোচনা করেছি। আমি আপনাদের বলতে চাই, আশা করি আপনারা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। এ বছরও আমাদের সারের দাম বৃদ্ধির কোন পরিকল্পনা নেই। সারের দাম বাড়ানো হবে না।’

কৃষক যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার পায় সেজন্য সভায় সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন সারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

আগামী অর্থবছরে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া, ১৬ লাখ টন ডিএপি, সাড়ে ৭ লাখ টন টিএসপি, ৯ লাখ টন এমওপি, ৩০ হাজার টন এমএপি, ৩০ হাজার টন এনপিকেএস, সাড়ে ৫ লাখ টন জিপসাম, এক লাখ ৪০ হাজার টন জিংক সালেফেট, ২ হাজার ৫০০ টন অ্যামোনিয়াম সালফেট, ৯০ হাজার টন ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং ৫০ হাজার টন বোরন প্রয়োজন হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চাই। সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সার উপকরণ হিসেবে আমাদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা প্রতিবছরই আগামী অর্থবছরে কী পরিমাণ সার লাগবে সেটি নির্ধারণ করি। আমরা সেই সার কীভাবে সংগ্রহ করব, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন কত হবে, বিদেশ থেকে কত আমদানি করব- সেটিও নির্ধারণ করা হয়।’

‘আরেকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আমরা সার নিয়ে কোন সংকট সৃষ্টি হতে দেব না। সার নিয়ে যাতে কোন কৃষককে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।’

স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখন বিসিআইসির (বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন) সার কারখানাগুলো যে সক্ষমতা আছে, যদি গ্যাস সরবরাহ করা যায় তাহলে খুব কম পরিমাণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। বা করতে হবেই না, আমরা এমন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি। গত দু-তিন বছর ধরে ঠিক মতো গ্যাসের সরবরাহ হচ্ছে না। মাঝে মাঝেই সার কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়।’

‌‘তবে ইউরিয়া সার যতটা সম্ভব স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে আমরা উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবো। জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো, তারা যাতে সার কারখানাগুলো সচল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ রাখে। গ্যাসের দাম বাংলাদেশে কম হওয়াতে স্থানীয়ভাবে সার উৎপাদন খরচও বেশি না। তা সত্ত্বেও যদি একেবারে আন্তর্জাতিক দামে যদি বিসিআইসি মন্ত্রণালয়কে দেয়, তাতেও দাম আমাদের অনেক কম পড়বে।’

কামরুল আশরাফ খান পোটন নামের নরসিংদীর সাবেক একজন সংসদ সদস্য ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে আমরা কালো তালিকাভুক্ত করেছি। তিনি আমাদের এখানের কোনো দরপত্রে অংশ নিতে পারবেন না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উল্টো তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। কীভাবে যেন আদালত তাদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।’

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা কতটুকু পাওয়া গেছে- জানতে চাইলে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরগুলোতে যাতে সার সংকট না হয়, কারখানাগুলো যাতে সচল রাখতে পারি, তা নিয়েই আমরা বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম যেহেতু বেড়ে গেছে, সেহেতু আমদানির চেয়ে আমাদের কারখানাগুলো সচল রাখতে পারলে লাভ বেশি হয়। কারণ আমরা আমদানি নির্ভরতা কমাতে চাই। কারখানাগুলো নিজেদের সক্ষমতা অনুসারে সচল রাখার চেষ্টা করছি।