শিরোনাম
২৬ মার্চ, রমজানের তৃতীয় দিন। বলধা গার্ডেন থেকে বাসে ওঠেন একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক বুলবুল ইসমাইল। বাসে ওঠার পরই পকেটে হাত দিয়ে দেখেন, মোবাইলটি নেই। খোঁজাখুজি করেও মোবাইলটি আর পাওয়া যায়নি। পরে রাজধানীর ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
বুলবুল ইসমাইল বলেন, বাসে ওঠার সময় ভেতরে ফাঁকা থাকলেও গেটে ভিড় ছিল। উঠে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই পকেটে হাত দিয়ে দেখি মোবাইলটা নাই।
রাজধানীতে প্রতিদিন মোবাইল, মোটরসাইকেল, টাকা চুরি, ছিনতাইসহ এমন নানান অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ঈদ আসলে বাড়ে এসব অপরাধীদের উপদ্রব। রমজান শুরুর মাত্র এক সপ্তাহেই চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে প্রায় অর্ধশত। এসব নিয়ন্ত্রণে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এবছর রাজধানীতে বিশেষ তৎপরতা শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বিশেষ করে ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির সদস্যদের ধরতে রমজান শুরুর আগে থেকেই চলছে অভিযান। নগরজুড়ে রয়েছে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা।
ডিএমপি ও এর বিভিন্ন থানা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নিরাপত্তায় কাজ করছে ডিএমপির ৫০টি থানা। অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, চোর, ছিনতাইকারীদের ধরতে সড়কে ও বিভিন্ন শপিংমলে নিয়োজিত রয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশ। শপিংমলে আসা নারী ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন নারী পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল বা মার্কেটগুলোতেও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি যেমন চালানো হচ্ছে, সড়কেও বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। মানুষ যাতে যাতায়াত এবং কেনাকাটা শেষে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারে, সে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিএমপির ৫০টি থানায় কাজ করছে ৭ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। থানাগুলোতেও দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। রমজান শুরুর আগেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে থানা পুলিশ। রোজার শুরুর দিন থেকেই বিভিন্ন মার্কেটে বিশেষ দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের সদস্যরা।
রাজধানীর নিউমার্কেটে দায়িত্বরত উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. রায়হান উদ্দিন বলেন, রমজান শুরুর আগেই নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছিল। ডিসি স্যারসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে পুরো রমজান মাসে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়। সে আলোচনার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করছি। মানুষ যেন নিরাপদে বেচাকেনা করে বাসায় ফিরতে পারে এবং কোনো ধরনের চুরি, ছিনতাই না ঘটে, সেজন্য তৎপর রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, রাস্তার পাশে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাস্তা বা ফুটপাতে সিলিন্ডারে কোনো ধরনের রান্নার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে রমজান মাসে রাস্তার পাশে ইফতারির দোকান বসিয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করে ইফতার তৈরি ও বিক্রি যেন না করতে পারে তা নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। তবে ফুটপাতে সারাবছর হকাররা যেসব জিনিসপত্র বিক্রি করেন তা করতে পারলেও রাস্তায় বসার সুযোগ নেই।
রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিক্ষুকরা রাজধানীতে আসেন। তাদের উপরও বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন মার্কেটে থাকা কমিউনিটি পুলিশকেও সক্রিয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রাজধানীর সড়কে সাধারণ দিনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। কোনো উৎসব বা আয়োজনে সড়কে যানজটের ফলে ভোগান্তি আরও বাড়ে। পুরো রমজানজুড়েই ইফতারের আগে নগরবাসীর ঘরে ফেরার তাড়া থাকায় তীব্র যানজট থাকে সড়কে। ফলে রমজানে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। যদিও তাতে কাজ কতটা হয়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
ঢাকা মহানগরীতে দূরপাল্লা ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কোনো বাস সড়কে রেখে বা থামিয়ে যাত্রী না ওঠানো, প্রধান সড়কে না দাঁড়ানো, ঢাকা মহানগরের প্রবেশ ও বাহির পথে শৃঙ্খলা মেনে চলা, স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজি, বাস ইত্যাদি বাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে চলাচল করা, যাত্রীদের প্রধান সড়কে অপেক্ষা বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করাসহ ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, রমজানে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে। বিশেষ করে অফিস শুরুর সময় ও শেষে এবং ইফতারের আগে নগরীর লোকজন যেন তাদের গন্তব্যে ফিরতে পারেন সেজন্য তৎপর রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে নগরীর নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চুরি, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টির হাত থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা করতে বিশেষ অভিযান চলছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা মার্কেট ও শপিংমলে নিরাপত্তা দেওয়া এবং যানজট নিরসনে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছেন।