২৫ মার্চ গণহত্যার ৫২ বছর ও বাংলাদেশ

ফানাম নিউজ
  ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০৩

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার নজির। এই গণহত্যার হাত ধরেই তৈরি হয় স্বাধীনতার পথ। আর সেই পথ ধরেই আসে স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার ৫২ বছর পার করছে বাংলাদেশ।

ইতিহাস বলছে, বাঙালি জনগোষ্ঠীর স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে ঢাকায় চালানো ওই হত্যাযজ্ঞের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা পণ্ড হয়ে গেছে- এ খবর দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ায় বীর বাঙালি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নেতার নির্দেশের অপেক্ষায়। 

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। কিন্তু এর আগে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। ২৫ মার্চের সেই রাতে ঢাকাবাসী নিরীহ বাঙালি সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক সেই সময়ই ভয়ংকর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। হিংস্র শ্বাপদের মতো জলপাই রঙের ট্যাংকগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাকের দিকে ধেয়ে যেতে থাকে। রচিত হয় এক কুখ্যাত ইতিহাস।

রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ-ট্রাক বোঝাই করে নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তানের সৈন্যরা ট্যাঙ্কসহ আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে ওঠে আধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। মুহুর্মুহু গুলিতে বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডবে তখন মত্ত পাকিস্তানি বাহিনী। হতচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়তে থাকে মৃত্যুর কোলে।

ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাশের পর লাশ। মধ্যরাতের ঢাকা তখন লাশের শহর। এমনভাবে নিরস্ত্র-ঘুমন্ত মানুষের ওপর চালানো এ হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত বিশ্ব বিবেক।

তবে এই হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসন অবসানের অধ্যায় রচিত হয়। তৈরি হয় স্বাধীনতার সিঁড়ি। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠে নামে বীর বাঙালি। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা এবার অতিক্রম করছে ৫২ বছর।

গণহত্যার সেই ৫২ বছর পর পেরিয়ে গেছে। শোককে শক্তিকে রূপান্তর করে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। যে পাকিস্তান আজীবন অত্যাচার করেছে বাঙালিদের উপর, সেই পাকিস্তান আজ দেউলিয়া আর সেই বাংলাদেশ এখন ঋণদাতা দেশ। সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোলমডেল। সেই বাংলাদেশ এখন নিজের টাকায় পদ্মাসেতুর মতো ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের সেতু নির্মাণ করেছে।

বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে বাংলাদেশ হেঁটে চলেছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাথাপিছু আয় এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশের উন্নয়ন পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সকল নির্যাতন, ষড়যন্ত্র কিংবা টেনে ধরা লাগামকে পেছনে ফেলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি এই বাংলাদেশ, শোকাবহ এই দিনে তাদেরকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।