বাকস্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়নি: আইনমন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:২৯

ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শেপিং অব থার্ড সেক্টর-ল অ্যান্ড পলিসিস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। অনুষ্ঠানে বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন-২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।

আইন সংশোধনের জন্য নাগরিক সমাজ কর্তৃক প্রস্তাব উপস্থাপন উপলক্ষে ইউএসএইড, ইন্টারন্যাশনাল-সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) ও কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

আইনমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথা আগেই বলে রাখি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট কিন্তু কারও বাকস্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য করা হয়নি। পেনাল কোডে আমাদের অপরাধগুলো লিপিবদ্ধ করা আছে। চুরি করলে কী শাস্তি হয়, তা সেখানে লেখা আছে। প্রযুক্তির বিস্তার এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এখন চুরি আর ফিজিক্যালি করতে হয় না, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

তিনি বলেন, আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে এলে অংশীজনদের সঙ্গে একটি বৈঠক করা হয়েছিল। এরপর সংসদে স্থায়ী কমিটির সভায় এটকো ও সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে অংশীজনদের কিছু কিছু পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। দুঃখের হলেও সত্য এই আইন করার পর আমরা অনেক মিসইউজ ও অ্যাবিউজ দেখেছি। যখন এই আইনের যথেষ্ট অপব্যবহার হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসেছিলাম এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসেছিলাম।

তিনি বলেন, সেই বৈঠকে আমরা প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। এরপর আমি জেনেভায় গিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, পৃথিবীতে এরকম কোনো আইন আছে কি না, যদি থেকে থাকে তাহলে তার বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো কী? সেটা জানা এবং সেটাকে এই আইনের সঙ্গে যুক্ত করে দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করা।

আনিসুল হক বলেন, ওই বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিস, আইন, পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি ডিভিশনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে এ বিষয়ে একটি সাজেশন পাওয়া গেছে এবং সেটা সরকার দেখছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া আছে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলেই কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।

তিনি বলেন, সব আইনে কিছু কিছু সিস্টেমিক প্রবলেম আছে, কিছু কিছু আইনে ইমপ্লিমেন্টেশনে (বাস্তবায়নে) প্রবলেম আছে। যখন বাস্তবায়নে সমস্যা হয় তখন আইনটি আলোচনার টেবিলে আসে। তখন বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা দেখা হয়। ঠিক সে কারণে আজকেও আমি বলি, এ আইন নিয়ে আবার বসবো, যদি রুলসের (বিধি) পরিবর্তন করে এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি, অবশ্যই আমরা সেদিকে যাবো। যদি তারপরও দেখি রুলস না আইনটির কিছু সংশোধন প্রয়োজন, তাহলে আমরা সেটাও করবো।

আইনমন্ত্রী বলেন, যদি ঢালাওভাবে আমরা বলি আইনটা বাতিল করে দেওয়া হোক, তাহলে সেটা যুক্তিসঙ্গত হবে মনে হয় না। আজকে এখানে এ বিষয়ে যা বলা হয়েছে তা নিয়ে আবার বসবো। সেটা রোজার আগেও বা রোজার পরে হতে পারে। আমার মনে হয় রোজার আগে বসলেই ভালো হবে। কারণ এ বিষয়টি যেন সামনের বাজেট অধিবেশনেই সংসদে তোলা যায়।

তিনি আরও বলেন, আপনারা যেমন এদেশের নাগরিক আমরাও তা-ই। আপনাদের যেমন সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, আমাদেরও সেরকম আনুগত্য আছে। আমরা চাই না সংবিধানবিরোধী কোনো আইন হোক।

আইনমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যেন সঠিক ও সাবলীলভাবে চলতে পারে, সেজন্য বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ এর বিধিমালা দ্রুত প্রণয়নের বিষয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সঙ্গে কথা বলা হবে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির হিসেবে বক্তব্য দেন ইউএসএইডের মেধাবী গিরি। ইউএসএইডের প্রমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটসের (পিএআর) মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ইউএসএআইডির বাংলাদেশের ডেপুটি মিশন ডাইরেক্টর রেন্ডি আলী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার ও আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী খুশী কবিরসহ দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।