ভাষা শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ফানাম নিউজ
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:৫৭

যাঁদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই সব শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ বাহান্নোর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সার বেঁধে এগিয়ে যাচ্ছেন শহীদ মিনারের দিকে।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। প্রথমেই তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির প্রাণের মাতৃভাষা বাংলা উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু এ দেশের বীর সন্তানেরা তাজা রক্ত দিয়ে শাসকগোষ্ঠীর এই অপচেষ্টাকে রুখে দেন।

১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকায় শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করেন ভাষার জন্য লড়াইরত এ দেশের ছাত্র-জনতা। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ মিছিলে গুলি চালালে সালাম, বরকত, রফিক, সফিউর, জব্বারসহ নাম না–জানা অনেক বীর সন্তানের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। এরপর ১৯৫৬ সালে এ দেশের মানুষের প্রাণের ভাষা, মায়ের ভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এ জন্য জাতি প্রতিবছর কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে সেসব ভাষাশহীদদের। আজ সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। আজ শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠছে দেশের শহীদ মিনারগুলো। সবাই গাইছেন অমর গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...।’

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এ জন্য এখন বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই অমর এই দিনটি পালিত হয়। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও আজ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।

দিনটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় অমর একুশের চেতনা আজ অনুপ্রেরণার অবিরাম উৎস। তবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির যথাযথ চর্চা ও সংরক্ষণে আরও যত্নবান হতে হবে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে বর্তমান প্রজন্মকে বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত বিভিন্ন ভাষার ওপর প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’, যা স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে অর্জিত হবে।