শিরোনাম
যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী একটি ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এ ঢাকা শহরেই রেল যোগাযোগের আলাদা একটা পরিবেশ তৈরি হবে। এতে মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত ও জ্বালানি খরচসহ অনেক কিছুই সাশ্রয় হবে। যানজটমুক্ত হবে ঢাকা শহর। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নতুন নতুন রেললাইন নির্মাণ করছে। এতে সারাদেশে রেল যোগাযোগের দারুণ নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। রেলখাতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নব-দিগন্তের সূচনা হবে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে রেলওয়ের পরিষেবায়।’
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ রেলওয়ের তিনটি প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৬৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার রেলপথে রূপপুর (ঈশ্বরদী), শশীদল (কুমিল্লা) ও জয়দেবপুর (গাজীপুর) স্টেশন থেকে যুগপৎভাবে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি। এটা সীমিত পরিসরে চলাচলও করছে। পরবর্তীসময়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে আমরা পাতালেও যাচ্ছি। এরইমধ্যে এমআরটি লাইন-১-এর অধীনে পাতাল রেলের নির্মাণকাজেরও উদ্বোধন করা হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় যেসব রেলসংযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার সেগুলো একে একে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি-১) অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (ডিটিজেডিএলপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের নির্মাণকাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ দশমিক শূন্য ৯ কিলোমিটার রুটে ডাবল লাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ সেকশনে ডাবল লাইনে ট্রেন চালু করা হলে ধীরাশ্রম স্টেশনে ক্রসিংয়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। ফলে সব ট্রেনের যাত্রার সময় বাঁচবে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে।’
রেল নিয়ে নানা খেলা চলছে
বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ নিয়ে নানা খেলা চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসকরা এ দেশের কোনো মঙ্গল বা উন্নতি চায়নি। যার কারণে সাধারণ মানুষের যাত্রী পরিবহনের যে কয়টা মাধ্যম ছিল, একে একে তা সবই ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এমনকি রেল লাভজনক নয়, এ অজুহাত তুলে রেলকেও বন্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়। রেলের লোকবল গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, অনেক রেললাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী, তখনই এটা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেলপথ সংযোগ স্থাপনসহ রেলকে পুণর্গঠনের পদক্ষেপ নিই। দ্বিতীয় বার সরকারে এসে রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করেছি। কারণ রেল মন্ত্রণালয় সড়কের সঙ্গে থাকায় অধিকাংশ বরাদ্দই সেখানে চলে যেতো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার গত ১৪ বছরে ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করেছে। ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর এবং এক হাজার ২৯৭ কিলোমিটার লাইন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ১২৬টি নতুন স্টেশন ভবন ও ২২৩টি স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণের পাশাপাশি ৭৩২টি নতুন রেলসেতু, ৭৭৪টি রেলসেতুও পুনর্নির্মাণ করেছি আমরা। এছাড়া ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ। পরে রেলওয়ের তিনটি প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।