শিরোনাম
জেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত অনলাইন, আইপিটিভি, ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হলে তা ত্বরিত তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)। সেই সঙ্গে গুজবটি যে গুজব, তা তুলে ধরার জন্য সত্য তথ্য প্রকাশের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডিসিদের দেওয়া হয় এ নির্দেশ।
ডিসিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে অনেকগুলো অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল এবং আইপিটিভি আছে। যেগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই। ইউটিউব চ্যানেল আছে। যারা সেগুলোতে কাজ করে, তারা নিজেদের আবার সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। সেগুলোর মাধ্যমে অনেক সময় গুজব ছড়ানো হয়। অনেক সময় ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয় এবং বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনার সময় এ কথাটি উঠে এসেছে।
‘আমরা তাদের জানিয়েছি, সর্বসাকুল্যে ১২টি আইপিটিভি আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। বাকি সবগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন। আমরা এ পর্যন্ত ১৭০টির বেশি অনলাইন পোর্টালকে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছি। দৈনিক পত্রিকার অনলাইন হিসেবে আরও ১৭০ এর বেশি রেজিস্ট্রেশন দিয়েছি। টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টাল হিসেবে আরও ১৫-১৬টি দেওয়া হয়েছে। বাকি সবগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন।’
তিনি বলেন, সেগুলোর (অনিবন্ধিত অনলাইন ও আইপিটিভি) ব্যাপারে আমরা জেলা প্রশাসকদের বলেছি, আপনারা যদি দেখেন কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং গুজব ছড়াচ্ছে, অসত্য ও ভুল তথ্য পরিবেশন করে সমাজে হানাহানি তৈরি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, আবার অনেক সময় কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সংবাদ পরিবেশন করে সেটিকে আবার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভিন্ন কাজে। সেগুলো হলে আমরা যাতে তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি সেজন্য আমাদের জানাতে বলেছি। একই সঙ্গে সত্য তথ্য যাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবেশন করা হয়, সে বিষয়ে পরামর্শ তাদের দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সিনেমা হল পুনর্নির্মাণ, আবার চালু করা ও আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন সিনেমা হল তৈরির জন্য এক হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। সেটি মাঠ পর্যায়ে সবাইকে অবহিত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার তো প্রশাসনকে নিয়ে কাজ করে। সরকারের রাজনৈতিক অংশ এবং প্রশাসনিক অংশ একসঙ্গেই কাজ করতে হয়। অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সরকার তার কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রশাসনের মাধ্যমে করে। আমাদের সরকার প্রশাসনকে কোনোভাবেই দলীয়করণ করেনি, করার কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই।
তিনি বলেন, যারা ডিসি হয়েছেন, সচিব হয়েছেন কিংবা যারা বিভাগীয় কমিশনার হয়েছেন, তারা তাদের যোগ্যতা দিয়েই হয়েছেন। সুতরাং প্রশাসনকে আমরা কখনো দলীয়করণ করিনি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, জিয়াউর রহমানের সময়, খালেদা জিয়ার সময়, সাত্তারের সময় প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হয়।
নির্বাচন কেন্দ্রিক গুজব প্রতিরোধে ডিসিদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আজকে এখানে আলোচনা হয়নি। কারণ সরকার নির্বাচন আয়োজন করে না। নির্বাচন আয়োজনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা দিতে হলে জেলা প্রশাসকদের নির্বাচন কমিশন দেবে। সেটি এখানে আমরা আলোচনা করি নাই। কারণ এটা আলোচ্য বিষয় না।
গুজবের বিষয়ে ডিসিরা তাৎক্ষণিক আপনাদের জানাবেন নাকি ব্যবস্থা নেবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা চাইলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না। কারণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে একটি প্রক্রিয়া আছে। সেটি বিটিআরসিকে জানাতে হয়। সুতরাং তারা চাইলেই পারেন না। আমাদের যেন তড়িৎ জানানো হয়।
‘কিন্তু গুজব ছড়ায় কয়েক ঘণ্টায়, আর সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েকদিন লেগে যায়। টাইম যেটি বেশি লাগে সে সময় গুজব থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেটি হচ্ছে- গুজব রটানো হচ্ছে, সেটি যে গুজব, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যদি সেটি করা হয়, সেটি যে গুজব, সোশ্যাল মিডিয়াতেই যেন বলা হয় এটি গুজব, সত্যটা এই। তারপর আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এই পরামর্শটি আমরা তাদের দিয়েছি।’
জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনা ছিল। কোন আইপিটিভিগুলো নিবন্ধিত, তারা জানতে চেয়েছে, আমরা জানিয়ে দিয়েছি। কোন অনলাইনগুলো নিবন্ধিত, আমরা তাদের জানিয়ে দেবো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে তথ্য অফিস করার প্রস্তাব একজন দিয়েছেন। তবে আমি মনে করি প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে সব মন্ত্রণালয়ের অফিস থাকতে হবে, তা কিন্তু নয়। ক্রমাগত সরকারের আকার বড় করা সমীচীন নয়। এ কথাটা আমরা তাদের বলেছি।