শিরোনাম
সরকারের ব্যর্থতা থাকলে বিরোধী দলকে তা খুঁজে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সফলতা কী, ব্যর্থতা কী এটা যাচাই করবে জনগণ। এটা যাচাই করা আমার দায়িত্ব নয়। সততা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে ব্যর্থ হবো কেন? কোথায় সাফল্য, কোথায় ব্যর্থতা সেটা জনগণই ঠিক করবে।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ফখরুল তার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে চান।
এর জবাবে ওই সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় সদস্যের যখন এতই আগ্রহ, তাহলে আমার ব্যর্থতাগুলো আপনিই খুঁজে বের করে দেন, আমি সংশোধন করে নেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কলেজেও রাজনীতি করেছি। ভিপি ছিলাম। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। রাজনীতি আমাদের পারিবারিক, একেবারেই রক্তে আছে। কিন্তু কখনো এত বড় দায়িত্ব নিতে হবে ভাবিনি। এ ধরনের কোনো আকাঙ্ক্ষাও ছিল না। এমনকি কখনো এই ধরনের দাবিও করিনি। সময়ের প্রয়োজনে যখন যে কাজ দিয়েছে, সেই কাজই করে গেছি। চেষ্টা করেছি। পঁচাত্তরের পরে যখন আওয়ামী লীগ দায়িত্ব দিলো, বিশেষ করে ১৯৮০ সালে যখন লন্ডনে গেলাম, সেখানে আওয়ামী লীগ সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছি।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনটা সফল হওয়া, কোনটা বিফল হওয়া, সেটা নয়। সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে।
জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় চারণের বেশে সারাদেশ ঘুরেছি। বাংলাদেশকে চিনেছি, জেনেছি। সরকার গঠনের পর তৃণমূলের মানুষ যাতে ভালো থাকে সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই কাজ করেছি। এখন তার সুফল পাচ্ছে জনগণ। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ, আর এখনকার বাংলাদেশে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা আমরা বয়োবৃদ্ধ যারা আছি তারা জানি। কিন্তু আজকের প্রজন্ম জানবে না। যদি সততা নিয়ে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করা যায় তাহলে ব্যর্থ হবো কেন?
‘ইতিহাস বিকৃতিকারী কাকে রেখে কার বিচার করবো’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের বিচারের আওতায় আনতে আইন প্রণয়ন করা হবে কি না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫’র পর ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। জাতির পিতাকে হত্যাকারী ও ক্ষমতা দখলকারীরা এই বিকৃতি শুরু করে। ধারাবাহিকভাবে তা ২১ বছর চলতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের মানুষকে সেই বিকৃত ইতিহাস থেকে মুক্তি দেয়। আজ বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবল উদ্ভাসিত নয়, দেশের মানুষ ও নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস জানার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এখন বিকৃতি করার সুযোগ নেই। কেউ তা করতেও পারবে না। এটা সম্ভবও নয়।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাস যারা বিকৃতি করেছে। আমি যদি ঠিক ‘৯৬ এর আগে যাই। তাহলে কাকে রেখে কার বিচার করবো। এটা হলো বাস্তবতা। আমি দেখি ৭৫’র পর যারাই ছিলেন। এমনকি যারা সত্য কথাটাও জানতেন তারাও মিথ্যার ওপর আশ্রয় নিয়েছিলেন। এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। রেডিও-টেলিভিশন, পত্রিকা, পুরোনো দিকটায় তাকালে কেউই বাদ যায়নি। এদের বিচার করতে গেলে তো কাকে রেখে কাকে বিচার করবো সেটাই প্রশ্ন। আমি পরিষ্কার কথা বলি। খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ এর প্রতিবাদ করেছেন, বা সঠিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতাটা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।
যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছে ইতিহাসই তাদের বিচার করে দিয়ে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা যায় না। যারা ইতিহাস বিকৃতি করেছে তাদের চরিত্রটা মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাজ হলো মানুষের কাছে সত্য ইতিহাসকে তুলে ধরা। ইতিহাস আজকে মানুষের সামনে প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ তার চর্চা করছে। আজকের যুব সমাজ ইতিহাস জানতে সব চেয়ে বেশি আগ্রহী এটাই বড় বিচার। যারা সত্যটাতে মিথ্যা দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিল তারাই আজকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে চলে গেছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে।