শিরোনাম
নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল গত বছরের আগস্ট মাসে। পরিকল্পনা অনুসারে, ভারতের বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসবে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট নেপালি বিদ্যুৎ। তবে এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক মনোভাব সত্ত্বেও অনুমোদন মেলেনি এখনো। এর জন্য সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ)। খবর কাঠমাণ্ডু টাইমসের।
গত বছর নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ) ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ত্রিপক্ষীয় চুক্তির জন্য ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেডকে (এনভিভিএন) অনুরোধ জানাতে সম্মত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারবে নেপাল। প্রাথমিকভাবে, বহরমপুর-ভেড়ামারা ক্রস-বর্ডার হাই-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লিংক ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
চুক্তির সমঝোতা মোতাবেক এরই মধ্যে এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগমের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে নেপালের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। এনইএ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুল মান ঘিসিং বলেছেন, ‘প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় কোম্পানিটি জানিয়েছিল, ভারতের বিদ্যমান ট্রান্সমিশন অবকাঠামোতে নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পাঠানোর মতো অতিরিক্ত সক্ষমতা না-ও থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতীয় পক্ষের কাছে দ্বিতীয়বার অনুরোধ জানাই। এবার বলা হয়েছে, তারা ট্রান্সমিশন সক্ষমতা পুনর্মূল্যায়ন করবে এবং প্রতিক্রিয়া জানাবে।’ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন নেপালের এ কর্মকর্তা।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) সম্মেলন চলাকালে নেপাল-ভারত পার্শ্ব বৈঠকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন নেপালি কর্মকর্তারা। ভারতের পাওয়ার গ্রিড করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে তাদের।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেপালের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (আইপিপিএএন) ভাইস-প্রেসিডেন্ট আশিস গর্গ বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে, বহরমপুর-ভেড়ামারা লাইনটি সম্পূর্ণ অধিকৃত এবং এতে নেপালি বিদ্যুৎ রপ্তানির মতো অতিরিক্ত সক্ষমতা নেই।’
এনইএ প্রধান ঘিসিংও ভারতীয় কর্মকর্তাদের এমন জবাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ভারতীয় পক্ষকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিশন লাইনটিতে অতিরিক্ত ৪০-৫০ মেগাওয়াট যোগ করার জন্য অনুরোধ করেছে নেপাল।
শুধু নেপালই নয়, বাংলাদেশ সরকারও নেপালি বিদ্যুৎ আমদানিতে সহায়তার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দেশটির মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুমতির জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। জবাবে ভারতীয় পক্ষ জানায়, এ বিষয়ে এরই মধ্যে তাদের একটি নির্দেশিকা রয়েছে।
এছাড়া, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় নেপাল-ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ভারতের ‘দৃশ্যমান সহযোগিতা’ চান বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশ ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। বর্তমানে এর হার তিন শতাংশেরও কম। কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতকেও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়তা করতে পারে জলসমৃদ্ধ নেপাল।