শিরোনাম
থানা ও পুলিশকে জনগণের আইনি সহায়তা পাওয়ার প্রাথমিক কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, থানায় আসা বিপন্ন মানুষকে তাদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে আপনাদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। থানায় এসে কোনো ব্যক্তি যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন।
‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩’ উপলক্ষে বুধবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
এসময় পুলিশের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশকে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলারও আহ্বান জানান।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনি সেবা পেতে জনগণ যেন হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে জনমুখী সেবা চালুর মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, মনে রাখবেন, জনগণকে সেবা দেওয়া আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডে ইত্যাদি জনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পুলিশের জন্য অনেক সহজ হবে।
পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরও বাড়াতে এ ধরনের আরও প্রযুক্তিনির্ভর জনমুখী সেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করারও তাগিদ দেন তিনি।
প্রথাগত অপরাধের সঙ্গে ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ও সাইবার বুলিংসহ সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ পুলিশকে এগিয়ে থাকতে হবে উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ পুলিশে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি সংযোজন ও ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ দমনে উদ্যোগী হতে হবে। মাদকের বিস্তার রোধে পুলিশের পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ দমনেও বাংলাদেশ পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। পিতা-মাতা, অভিভাবক ও পরিবারকেও এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, পুলিশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
কোভিড-১৯ মহামারির মানবিক বিপর্যয়কালে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করে ১০৬ জন অকুতোভয় পুলিশ সদস্যসহ দেশ ও জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন সময়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, রাষ্ট্রপতি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিব, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি।