শিরোনাম
উৎপাদন বাড়াতে চিনি কারখানায় এক হাজার কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে দেশবন্ধু গ্রুপ। এতে গ্রুপটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু সুগার মিলসের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এদিকে চলতি বছরে এই ব্যবসায়ী গ্রুপটি ৮শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এতে গ্রুপটিতে এক বছরে প্রায় পাঁচ হাজার নতুন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার বেড়েছে ১৪ শতাংশ।
সম্প্রতি দেশবন্ধু গ্রুপের কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশবন্ধু গ্রুপের নরসিংদীর চরসিন্দুর পলাশ শিল্প এলাকায় অবস্থিত সব কারখানায় চলছে কর্মযজ্ঞ।
গ্রুপটির দায়িত্বশীলরা জানান, গত বছর দেশবন্ধু গ্রুপের অধীনে কাজ করতো ২০ হাজার মানুষ। বর্তমানে তা বেড়ে ২৫ হাজারে পৌঁছেছে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে উৎপাদমুখী নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু সুগার মিলস, সাউথ ইস্ট সোয়েটার, জিএম অ্যাপারেলস, বেভারেজ, প্যাকেজিং ও দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলসসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও উৎপাদন বাড়াতে ২০২২ সালে ৮শ কোটি টাকা নতুন করে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এতে নতুন করে ২৫ শতাংশ কর্মসংস্থান বেড়েছে। গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার দুই হাজার ৪শ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দুই হাজার ৮শ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়লেও প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎপাদন ও বিক্রি কার্যক্রম অর্জিত হয়নি বলে জানিয়েছেন গ্রুপটির কর্মকর্তারা।
এর কারণ হিসেবে তারা জানান, ৮শ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগের শুরুতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারাবিশ্বে নেমে আসে নতুন করে আর এক বিপর্যয়। করোনা শঙ্কা যেতে না যেতেই শুরু হয় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা। এর প্রভাবে দেশে ডলারের দামে রেকর্ড হয়। ডলারের অধিক মূল্য বৃদ্ধিতে কাঁচামাল আমদানিতে বড় ধাক্কা লাগে। কমতে থাকে রিজার্ভ, শুরু হয় ডলার সংকট। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় এলসি। একের পর এক কমতে থাকে বায়ারদের ক্রয় আদেশ। নতুন করে যুক্ত হয় গ্যাস সংকট, জ্বালানি ও বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততার সঙ্গে চড়া দাম। পাশাপাশি বাড়ে পরিবহন ভাড়া।
সার্বিক বিষয়ে দেশবন্ধু গ্রুপের পরিচালক (প্রশাসন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাকির হোসেন বলেন, করোনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশই বিপর্যস্ত। সেই ধাক্কা কাটতে না কাটতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে সারাবিশ্বে আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
তিনি বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো শুধু রপ্তানিনির্ভর। সে সব কোম্পানি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুদ্ধের কারণে। এমন বাস্তবতা সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অব্যাহত রেখে দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে দেশবন্ধু গ্রুপ। শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, রপ্তানি করা সব ধরনের পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে দেশবন্ধু।
জাকির হোসেন বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপ একটি মানবিক ও কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠান। এদিকে খুব অল্প সময়েই দেশবাসীর মন জয় করেছে দেশবন্ধু বেভারেজের সব ধরনের পণ্য। বিশেষ করে দেশবন্ধু মিনারেল ওয়াটার সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করতে পেরেছে। ফলে গত বছরে দেশবন্ধু বেভারেজ কারখানার নতুন সেকশনসহ সার্বিক উন্নয়নে করোনার মধ্যেই দুইশ কোটি টাকার বেশি নতুন বিনিয়োগ করা হয়েছ।
তিনি বলেন, কারখানায় উন্নত প্রযুক্তির ইটালিয়ান মেশিনারিজ স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ধীরগতিতে চলছে উৎপাদন কাজ। তবে কারখানার নতুন মেশিনারিজে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে প্রতি ঘণ্টায় উৎপাদন হবে ৭৫ হাজার (বিপিএইচ) বোতল। অর্থাৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ৬৫ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থান হবে প্রায় দেড় হাজার মানুষের।