শিরোনাম
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শান্তি রক্ষায় দুই দেশের মধ্যে তথ্য-যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসন, আকাশ সীমা লংঘন, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় নিয়ে অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সম্মেলন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দুই বছর ১০ মাস পর গত ২৪ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে চার দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়। এই সীমান্ত সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলেন বিজিবি মহাপরিচালক।
সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনার বিষয়ে মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেন, এতে আন্তঃসীমান্ত অপরাধী চক্রের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ অন্যান্য মাদক ও মানব পাচার রোধের বিষয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, সীমান্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান, যৌথ টহল পরিচালনা, রিজিয়ন ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে নিয়মিত সমন্বয় সভা, পতাকা বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে কথা হয়। এছাড়াও সীমান্তে আটককৃত, সাজাভোগকৃত উভয় দেশের নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) তাদের মূল আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়েও আলোচনা হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, নিয়ম ভেঙে আকাসসীমা অতিক্রমের বিষয়টি আমরা বলেছি। যদি এমনটা ঘটে তাহলে সীমান্ত এলাকায় স্থানীয়ভাবে শঙ্কা বা সংশয় তৈরি হয়। এটা সীমান্তে শান্তির জন্য বাধা। যদি ড্রোন, হেলিকপ্টার উড্ডয়নের প্রয়োজন হয়, যেন আমাদের তা অবগত করা হয়। আমরা যেন লক্ষ্য রাখতে পারি সীমান্ত অতিক্রমের বিষয় ঘটে কি না। তারা (বিজিপি) আশ্বস্ত করেছেন তথ্য শেয়ার করবেন এবং এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে না।
সীমান্তে স্থলমাইন রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, স্থলমাইন বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি হতাহতের শিকার হয়েছেন। তাদের (মিয়ানমারের) নাগরিকও হতাহতের শিকার হয়েছেন। সীমান্তে কাঁটাতারে ইলেক্ট্রিফিকেশন করা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত বা ভুলবশত দুই দেশের নাগরিক যদি এর সংস্পর্শে আসে তাহলে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পাররে। তারা এ ব্যপারে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জয়েন্ট সার্ভের মাধ্যমে টহল ঠিকমতো করতে পারলে স্থলপথে সীমান্ত অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবো। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ অন্যান্য মাদক ও মানব পাচাররোধে বিজিবির সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন, মাদক চোরাচালানে বিজিবি অনেকটাই সফল। তবে এখনো শতভাগ সফল হতে পারেনি। দুদেশের যৌথ টহলের মাধ্যমে এটা আরও কমানো সম্ভব হবে।
রোহিঙ্গাদের পত্যাবর্তনের বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ইতিবাচক বলা হলেও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, একটা বিষয় নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন যিনি বলেন তিনি গুরুত্ব সহকারে বলেন। যিনি বিষয়টি শুনছেন তিনিও কেমনভাবে নিচ্ছেন সেটি বোঝা যায়। আমরা যেসব বিষয় বলেছি। তারা প্রত্যেকটি জায়গায় অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে শুনেছেন। এসব গ্রহণ করে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে আমরা পেয়েছি এবং তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টা একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে তারা এ বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন। এই দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, এমন ভিডিও আমরা তাদের দেখিয়েছি। যুব জনগোষ্ঠীকে টেকনিক্যাল শিক্ষা দিয়ে ম্যানপাওয়ারে রূপান্তরিত করছি। যাতে তারা নিজেদের আবাসে ফিরে যাওয়ার পর নিজেদের চালিয়ে নিতে পারেন।
‘বাংলাদেশ অস্থায়ীভাবে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে মানবিক কারণে। এ বিষয়গুলো বলার পরে তারা এটা গ্রহণ করে আলোচনা করে কাজ করার কথা বলেছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করছে। আমরা আশা করতেই পারি তাদের কার্যক্রম চলমান আছে।’
মিয়ানমারের রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে তাদের আলোচনায় বার বার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছেন। সেখানে তাদের যে মিস ফায়ার চলেছে সেটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বলে জানিয়েছেন। এটা করে তারা সেখানে মানবিক বিপর্যয় রোধ করার চেষ্টা করছেন। আগের তুলনায় রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো। এটা রোহিঙ্গাদের ফেরতের জন্য ইতিবাচক।