ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ফলাফল পুনর্গণনার আদেশে তিনটি অডিট কার্ডের হদিস পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ওই সময়ে ভোট শেষে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দেওয়া ফলাফলই আবার গণনা করেছে ইসি। অডিট কার্ড না পাওয়ায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ফলাফলের সঙ্গে ভোটের সঠিক ফলাফল মেলানো সম্ভব হয়নি। এটিই আদালতের নির্দেশে প্রথমবারের মতো ইসির ভোট গণনা।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অডিট কার্ডে পুরো কেন্দ্রের ফলাফল সংরক্ষিত থাকে। তাই অডিট কার্ড গায়েব হওয়ার বিষটি ইচ্ছাকৃত হতে পারে। আবার প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ভুলেও হতে পারে। তবে অডিট কার্ড ছাড়াই ফলাফল গণনায় প্রশ্ন থেকে যায়। অডিট কার্ডে কেন্দ্রের টোটাল ফলাফল, আর পোলিং কার্ডে প্রতিটি বুথের ফলাফল থাকে।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ইভিএম ভোটগ্রহণ করা হয়। ডিএনসিসির ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের হলে আদালত পুনরায় ফল গণনার আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ফলাফল পুনর্গণনা সংক্রান্ত কমিটি ৫ নভেম্বর ফলাফল পুনর্গণনা করে।

কমিটির প্রধান ও নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মো. আবদুল বাতেন বলেন, ‘সিলগালা করা বস্তায় অডিট কার্ড প্লাস প্রিজাইডিং অফিসারে রেজাল্ট শিট, ইভিএম থেকে বের হওয়া ফলাফলের প্রিন্ট কপি থাকবে, এটাই নিয়ম। কোর্টের আদেশ অনুসারে আমরা সিলগালা করা বস্তাগুলো প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীদের সামনেই খুলেছি । তিনটা বা চারটা অডিট কার্ড মিসিং আছে। তবে ওখানে আবার প্রিজাইডিং অফিসারের যে রেজাল্ট শিট, সেটা ছিল এবং ইভিএম থেকে ফলাফলের যে প্রিন্ট কপি থাকে, ভোটের দিন যেটা বস্তার ভেতর দিয়েছিল সেটা পেয়েছি। সবার সামনেই ওটা কাউন্ট করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিশন, কোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে আমাদের কাজ হলো, যে ফাইন্ডিংস পেয়েছি তা দাখিল করা। আমরা যেটা পেয়েছি বা যেটা পাইনি হুবহু তা কমিশন এবং কোর্টের কাছে দাখিল করবো। কোর্ট ফাইনাল সিদ্ধান্ত দেবেন।’

তাহলে তো কেন্দ্রের ফলাফল আপনারা পুনর্গণনা করতে পারেননি-এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমরা তো গণনা করিনি। যে অডিট কার্ড পাইনি, ওটা আমরা ফাইন্ডিংস দেবো। শুধু মাত্র অডিট কার্ড দিয়ে পুনর্গণনা হয় না। যেখানে অডিট কার্ড পেয়েছি, সেখানে তো অবশ্যই অডিট কার্ডের তথ্য নিয়েছি, ইভিএমের প্রিন্টেট কপি এবং প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা ফলাফলের কপিও নিয়েছি। আর যেটার অডিট কার্ড পাইনি, সেখানে বাকি দু’টোর ফলাফল মিলিয়ে দেখেছি।’

অডিট কার্ড ছাড়া বিষয়টি কী স্বচ্ছ হলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতার বিষয়টি কোর্ট বলবেন।’ অডিট কার্ড ছাড়া আগের ফলাফলই দেখাতে পারেন, পুনর্গণনা তো হয় না- এমন বিষয় তুলে ধরলে তিনি আরও বলেন, ‘অডিট কার্ড একটা ফ্যাক্টর। কিন্তু অডিট কার্ডের বাইরেও যে নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ওইদিন যেমন অডিট কার্ডে রেজাল্টটা সংরক্ষিত আছে, তেমনি ইভিএম থেকে যে প্রিন্ট কপি নিয়েছে সেটাতেও ফলাফল সংরক্ষিত আছে এবং প্রিজাইডিং অফিসারের যে কপি সেটাও সংরক্ষিত আছে। একটা অডিট কার্ড পাওয়া যায়নি, সেখানে অবশ্যই আমরা বলবো যে অডিট কার্ড পাওয়া যায়নি।’

ইটিআই মহাপরিচালক বলেন, ‘এটা ইনটেনশনালি হতে পারে। আবার প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ভুল হতে পারে। কিন্তু বস্তাগুলো সিলগালা ছিল। ৫৪টি কেন্দ্রে ৫৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার ছিলেস। একজন প্রিজাইডিং অফিসার যেমন বলেছেন- অডিট কার্ড বস্তার ভেতরে দেওয়ার জন্য আমাকে বলা হয়নি। বাকিরা তো দিয়েছেন। তখন তিনি বলতে পারেননি কিছু। যে বস্তাগুলোর বাইরে সিলগালা ছিল না, সেগুলোর ভেতরের প্যাকেটগুলো সিলগালা করা ছিল। এতে সমস্যা ছিল না।’