শিরোনাম
১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভারস গ্রুপে (ইউএনআইএমওজি) একদল কর্মকর্তার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। এই উজ্জ্বল অংশগ্রহণের ৩৫ বছর হতে চলছে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা স্বদেশের জন্য উজ্জ্বল সম্মান বয়ে এনেছেন নানা ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে। সশস্ত্র মিশনে প্রাণ দিয়েছেন ১৬৪ জন বাংলাদেশি। এছাড়াও আহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে একটি গাড়ি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী (সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী) ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশের ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৮ শান্তিরক্ষী নিজেদের পেশাদারিত্ব এবং সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬৪ জন। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২৯ জন, নৌবাহিনীর চার জন, বিমান বাহিনীর ২২ জন ও পুলিশের ২২ জন।
গত ৩ অক্টোবর দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে একটি গাড়ি আইইডি বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন একজন। নিহত শান্তিরক্ষীদের সবাই সেনাবাহিনীর সদস্য। নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন সৈনিক জসিম উদ্দিন (৩১), সৈনিক জাহাঙ্গীর আলম (২৬) এবং সৈনিক শরিফ হোসেন (২৬)। এতে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হকও আহত হন।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ২৫৩ জন। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর ২২৫ জন, নৌবাহিনীর ৬ জন, বিমান বাহিনীর ৬ ও বাংলাদেশ পুলিশের ১২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো কিনসাসা বানফু-১-এর ডেপুটি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা আমাদের শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। বিশেষ করে বিদেশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে।’
বাংলা ট্রিবিউনকে মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘তাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সাথে আমাদের সংস্কৃতির কোনও মিল নেই। ভাষা, খাদ্যাভাস, আচরণগত, জাতিগত কোনও মিল নেই। পরিবারকে দূরে রেখে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যেকোনও ধরনের হুমকির বিষয়গুলো সামনে রেখেই আমরা আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করে যাচ্ছি এবং টহল জোরদার রেখেছি।’
বর্তমানে ২৪টি দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশের ৬ হাজার ৮২৫ সদস্য। এরমধ্যে রয়েছে সেনাবাহিনীর ৫ হাজার ৪৬৩ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৭, বিমান বাহিনীর ৫১৪ ও পুলিশের ৫০১ জন। কঙ্গোতে ১ হাজার ৬৫৪, দক্ষিণ সুদানে ১ হাজার ৬৭০, লেবাননে ১১৮, দারফুরে ১৯০, দক্ষিণ সাহারায় ২৪, মালিতে ১ হাজার ৪৩৯, সিএআর-এ ১ হাজার ৪১৮, আবেইতে ২৯৪ জন এবং ইয়েমেন, যুক্তরাষ্ট্র, সুদান, নেদারল্যান্ডস, ইথিওপিয়া ও ইতালিতে একজন করে দায়িত্ব পালন করছেন।
পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও দক্ষতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে ৫১৯ জন নারী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর ৩৪৮, নৌবাহিনীর ১০ জন, বিমান বাহিনীর ১৩ জন ও পুলিশের ১৪৮ জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৩২২ জন নারী সদস্য বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষায় কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রাসেলুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করছেন না।’
সম্প্রতি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিহত ৩ সদস্যের মরদেহ ফিরিয়ে আনার কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।