শিরোনাম
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন নতুন উন্নয়ন উদ্যোগে যুক্ত হলে লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ। জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকলে ওই উদ্যোগগুলোতে শামিল হতেও অসুবিধা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমান জটিল ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হলে বাংলাদেশের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা সহজ হবে।
এ বিষযে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘একই ধরনের অবস্থা হয়েছিল ২০১৪-১৫ সালে। ওই সময়ে চীন তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছিল। একই সঙ্গে তখন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। আমরা পরবর্তীকালে উভয় উদ্যোগে শামিল হয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে আমরা বিআরআইতে যুক্ত হওয়ার জন্য চুক্তি সই করি। অপরদিকে ২০১৮ সালে আইপিএসের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন গতিধারায় সম্পৃক্ত হতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দেওয়া হয়।’
দুটি উদ্যোগ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নয় জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, ‘যেহেতু উদ্যোগগুলো উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে, সেজন্য এখানে যুক্ত হতে কোনও বাধা দেখছি না।’
বাংলাদেশ সবসময় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উভয় উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হলে একটি ভারসাম্য নীতি বজায় থাকবে।’
এ বিষয়ে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘উদ্যোগগুলো সাংঘর্ষিক নয়। চীনের উদ্যোগে যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে যোগ দেওয়া যাবে না বা উল্টোটা, বিষয়টি সেরকম নয়।’
চীনের উদ্যোগটি বৈশ্বিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে এখন প্রশ্ন হচ্ছে—জাতীয় স্বার্থে উদ্যোগগুলো কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে।’
কূটনীতিক মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে আলোচনার সুযোগ কম। কারণ, এটি বেইজিং দ্বারা নির্ধারিত। কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কটি সবে গঠন করা হচ্ছে। গঠন করার সময়ে আলোচনায় যুক্ত হতে পারলে বাংলাদেশ তাদের মতামত জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবে।’
ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ পরেও নিতে পারবে। কিন্তু আলোচনায় যুক্ত হওয়াটা জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে বিভিন্ন দেশ এ বিষয়ে কী ভাবছে, সেটি জানতে পারবে। অপরদিকে এ ধরনের নেগোসিয়েশনে সরাসরি যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা হবে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সমশের মুবিন চৌধুরী বলেন, ‘গোটা বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের আলোকে বিচার করতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হয়। যেখানে আমাদের সুবিধা হবে, সেখানে আমাদের যুক্ত হওয়া উচিত।’
চীনের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভটি নতুন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কটি এখন গঠন হচ্ছে। যখন গঠন হয় তখনকার আলোচনায় যুক্ত হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরে কাঠামোর যে খসড়া তৈরি হয়, সেটি পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। কিন্তু এর আগে খসড়া নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন অংশগ্রহণ করলে নিজেদের মতামত তুলে ধরা যায় এবং খসড়া প্রণয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়।’
উল্লেখ্য, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময়ে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ইতোমধ্যে ঢাকাকে দিয়েছে বেইজিং। অপরদিকে এ বছরের মার্চে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশকে জানায় যুক্তরাষ্ট্র এবং আলোচনায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৩টি দেশ এ বিষয়ে আলোচনা করছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনও এতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।