শিরোনাম
শুধু আশ্বিনের পূর্ণিমায় নয়, এ সময়ের অমাবস্যায়ও ইলিশ ডিম ছাড়ে বলে গবেষণায় তথ্য মিলেছে। ২০০৮ সাল থেকে প্রথম আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার আগে ও পরে মিলিয়ে ১১ দিন মা-ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকেই এর সুফল মেলে।
২০০৩-০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করে মৎস্য মন্ত্রণালয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। সেই সময় থেকে আশ্বিনের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মিলিয়ে মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০’-এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫’ অনুযায়ী, এই ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেবে ভিজিএফ।
বাংলাদেশ ছাড়াও ইলিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা, যেমন- পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর ইলিশ ধরা হয়। এটি সামুদ্রিক মাছ, কিন্তু এই মাছ বড় নদীতে ডিম ছাড়ে। ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। সাগরে ফিরে যাবার পথে জেলেরা এই মাছ ধরে।
উৎপাদন বাড়াতে মৎস্য অধিদফতর ইলিশের জন্য ৫টি অঞ্চলে অভয়াশ্রম বানিয়েছে। অঞ্চলগুলো হলো— চাঁদপুরের ষাটনল হতে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার পুরো ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার মদনপুর ও চর ইলিশা হতে চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা, শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা এবং বরিশালের হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার এলাকা।
ইলিশ রক্ষায় মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এর ক্ষমতাবলে সরকার ঘোষিত এই পাঁচটি অভয়াশ্রমে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশ, জাটকাসহ (২৫ সেন্টিমিটার থেকে ১০ ইঞ্চি আকারের ইলিশ) সব ধরনের মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
এসময় অভয়াশ্রমে মাছ আহরণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্যকারী কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট জেলায় এসময় মৎস্য আহরণে বিরত থাকা নিবন্ধিত জেলেদের দুই দফায় ৮০ কেজি হারে ভিজিএফ বাবদ চাল সহায়তা দেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নির্ধারিত নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময় মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগরের লোনা পানি থেকে নদীর মিঠা পানিতে আসে। সরকারের সিদ্ধান্তে মা ইলিশ পাহারায় থাকবে অতিরিক্ত দেড় হাজার নৌ-পুলিশ। মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে নিয়মিত দায়িত্বের বাইরে নৌ-পুলিশের সদস্যরাও মোতায়েন থাকবেন। ইলিশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ না পেলে আগামীতে নদীতে ইলিশ পাওয়া যাবে না। একইসঙ্গে জাটকা সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলেই নদীতে ইলিশ মাছ বাড়বে। তখন আরও বেশি পরিমাণে ইলিশ আহরণ করা যাবে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, নদীতে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে যারা মাছ ধরতে নামে তারা সবাই মৎস্যজীবী নয়। তাদের নেপথ্যে অনেক ধনী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি থাকেন। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় অতীতের মতো এবারও এসব অসাধু ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দিনের পাশাপাশি এবার রাতেও অভিযান জোরদার করা হবে। এ সময় স্থানীয় বরফ কলগুলো বন্ধ রাখতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। গত বছরের মতো এবারও অবৈধ জাল উৎপাদনস্থলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ পথে ইলিশ পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।