শিরোনাম
বর্ণাঢ্য ও সুদীর্ঘ রাজনৈতিক এবং কর্মময় জীবন ছিল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর। তাকে বলা হয় দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যাকাণ্ডের পর সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
’৭৫ পরবর্তী কঠিন সময়ে তিনি সাহসী ভূমিকা পালন করেন সাজেদা চৌধুরী। এরপর জিয়া ও এরশাদের দীর্ঘ সামরিক ও স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলের নেতৃস্থানীয় পর্যায় থেকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মায়ের নাম সৈয়দা আছিয়া খাতুন। শিক্ষাজীবনে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মী। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর গোলাম আকবর চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সাজেদা চৌধুরী সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ইউনেস্কো ফেলোশিপপ্রাপ্ত হন এবং একই সময়ে তিনি বাংলাদেশ গার্ল-গাইড অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় কমিশনার হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মানসূচক সনদ সিলভার এলিফ্যান্ট পদক লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালে আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক ওমেন অব দি ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেন।
রাজনৈতিক জীবনে ১৯৫৬ সাল থেকে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৬৯-’৭৫ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতে গিয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২-’৭৫ সময়কালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২-’৭৬ সময়কালে বাংলাদেশ গার্ল গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ’৭৬ সালে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬ থেকে ’৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন৷ ১৯৯২ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফরিদপুর-২, নগরকান্দা, সালতা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ নবম সাধারণ নির্বাচনে সাজেদা চৌধুরী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি জাতীয় সংসদের উপনেতা হন৷ এরপর থেকে পর পর তিনবার জাতীয় সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পান তিনি।
১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফেরার পর তিনি সার্বক্ষণিক শেখ হাসিনা পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছিলেন৷ শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কঠিন মুহূর্তগুলোতে এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন৷ শেখ হাসিনা তাকে সব সময় ফুফু বলে শ্রদ্ধা করতেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শ্রদ্ধার জায়গায় রেখেছিলেন।
জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সাজেদা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর মরদেহ নেওয়া হবে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দায়। এরপর মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে বাদ আসর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) বেনজির আহমেদ।