ড. ইউনূস দায় এড়াতে পারেন না: ডিবি

ফানাম নিউজ
  ২৯ আগস্ট ২০২২, ০৭:৫৩

গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েক নেতার যোগসাজশে সাধারণ কর্মচারীদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা লুটপাটে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম মো. মাইনুল ইসলাম (৩৯)। তিনি গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি।

কুমিল্লা সদর থানার মগবাড়ি থেকে বুধবার তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও এক কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি চেক জব্দ করা হয়। রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিবির প্রধান বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস লুটপাটের দায় এড়াতে পারেন না। তদন্তে যা আসবে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।

এদিকে হাইকোর্ট বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমে শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছেন কিনা তা নির্ধারণ করবেন শ্রম আদালত। এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন। বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় রোববার প্রকাশিত হয়। এর আগে ১৭ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা বাতিলে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। ফলে নিু আদালতে এ মামলা চলতে বাধা নেই বলে জানান আইনজীবী।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ৫ জুলাই শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে মাইনুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিবির প্রধান বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা থাকলেও ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নন’ এবং ‘কোম্পানি অলাভজনক’সহ বিভিন্ন অজুহাতে লভ্যাংশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে দাবি জানালে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯ শ্রমিককে বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকেরা শ্রম আদালতে ১৯০টি মামলা করেন। কিন্তু শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোম্পানি ও শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েক নেতার যোগসাজশে মামলা তুলে নেওয়া হয়।

হারুন অর রশীদ বলেন, ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুযায়ী ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশের টাকা ও এ অর্থের সুদ হিসাবে আরও ৪ শতাংশ টাকা হারে কোম্পানি থেকে এ সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা জমা করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসাবে রাখা হয়।

ডিবির প্রধান বলেন, শ্রমিকদের সব পাওনা এ অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোনো অর্থ ছাড় করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন মিলে অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মাইনুল ইসলাম বলেছেন, গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকেসহ এই প্রতিষ্ঠানের আরও কর্মীদের অর্থের প্রলোভনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ইনডেমনিটি দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য এবং কর্মচারী ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবীকে অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিতভাবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি বা পারিতোষিক দিতে উৎসাহী করে।

৪৭৩ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে, বাকি টাকা কোথায় গেল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। ড. ইউনূস এর সঙ্গে জড়িত আছেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তে যা আসবে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় : কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসব অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই বিচার হবে। বিচারিক আদালত তা নির্ণয় করবেন। রায়ে বলা হয়েছে, শ্রম আইন লঙ্ঘন কতটুকু হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কিনা তা বিচারিক আদালতই নির্ণয় করবেন।

এজাহারে বলা হয়েছিল, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের নামে এ মামলা করেন। ড. ইউনূস ছাড়াও এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে মামলায় বিবাদী করা হয়।