শিরোনাম
বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং তাদের বিষয়ে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থা ও আসিয়ানের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হতে পারতো। মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান এবং বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা নিপীড়নে দেশটির সেনাবাহিনীর দায়মুক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: আশায় অনিশ্চয়তা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে কূটনীতিক, সুশীল সমাজ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, একাডেমিয়া, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, মিডিয়া এবং গবেষক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মনজুর হাসান ওবিহ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আইসিজে (আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত) এবং আইসিসির (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) কিছু বড় সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও পাঁচ বছরে রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং তাদের বিষয়ে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন ও পুনঃএকত্রীকরণের জন্য জাতীয় ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের কোনো সক্রিয় ও শক্তিশালী পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বর্তমান প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্য আমরা সবাই ক্যাম্পে কাজ করছি। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা থেকে মনোযোগ সরানো যাবে না। আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে কেউ স্বেচ্ছায় শরণার্থী হতে চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের ডিরেক্টর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপক অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও তাদের ভাগ্যের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। ফলে তারা অনেকটাই অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। কিন্তু শরণার্থীদের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন প্রজন্ম ধরে আটকে থাকার নজির রয়েছে অনেক।
এ সংকট সমাধানে তিনি রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক কণ্ঠস্বর শোনারও আহ্বান জানান এবং সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত ইতিবাচক অগ্রগতি, যেমন আইসিজে কর্তৃক ঘোষণার পর রোহিঙ্গাদের নিজস্ব পরিচয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাই কমিশনার) প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ বলেন, আমাদের প্রত্যাবাসনের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ক্যাম্পে যেসব কার্যক্রম চলছে সবই রোহিঙ্গাদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। তরুণ জনগোষ্ঠী, শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা ও দক্ষতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনোভাবেই রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক নেতাদের অগ্রাধিকারের এজেন্ডা থেকে সরানো যাবে না।
সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন বলেন, অনেক শিশু আছে যারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের সেসব শিশুর জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে এবং মনে রাখতে হবে তারা এখানে স্বেচ্ছায় আসেনি। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে শিশুদের সুরক্ষা আবশ্যক। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে, যতই সময় লাগুক না কেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন মানে শুধু তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই নয়, এটি হতে হবে মর্যাদার সাথে। প্রত্যাবাসন বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।
কোনো ইসলামিক রাষ্ট্রকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি, বৈঠকে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা।
বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন- রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস, বাংলাদেশ (আরআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা, অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড সদস্য আনোয়ারা আন্না আমান, আইএলওর স্কিল প্রজেক্ট প্রগ্রেসের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার পেড্রো জুনিয়র বেলেন, সুইডেন দূতাবাসের হিউমেনিট্যারিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্টের সমন্বয়ক মাটলিডা সেনসন, আইএলওর স্কিল অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্টের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার পিটার বেলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুইডেন দূতাবাসের হেড অফ ভিএম তাকিয়াহিনো উতসুমি, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের হিউমেনিটারিয়ান প্রোগামের প্রতিনিধি সবেত আহমেদ প্রমুখ।
মিয়ানমারের ব্যাপক সেনা নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত ও সাগর পাড়ি দিয়ে নতুন করে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরইমধ্যে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার।