শিরোনাম
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে দেশের সব চা বাগানে শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে সকাল ৬টা থেকে এই ধর্মঘট চলছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বি-৭৭) সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ফলে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।
তিনি জানান, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে চা শ্রমিকরা সিলেট-বিমানবন্দর সড়কের পাশে লাক্কাতোড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে বসে আছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, দেশে প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ক্রয় ক্ষমতা চা শ্রমিকদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দৈনিক ১২০ টাকা যে মজুরি আমরা পাই তা দিয়ে পেট চলে না। এ অবস্থায় গত ৩ আগস্ট আমরা চা বাগানের মালিকদের কাছে শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সেটাতে কর্ণপাত করেননি। এর প্রতিবাদে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে সারাদেশের চা বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছি। তারপরও মালিকপক্ষ আমাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় আমরা ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।
জানা গেছে, চলমান এই সমস্যা সমাধানের জন্য গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের মৌলভীবাজারের কার্যালয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপপরিচালকের আমন্ত্রণে মালিকপক্ষ ও চা শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেই বৈঠকে চা বাগানের মালিকপক্ষের কেউ আসেননি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী বলেন, আমরা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করার দাবি করেছি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সমঝোতা বৈঠকের জন্য আমাদের শ্রমকল্যাণ দপ্তরে ডাকা হয়। আমরা সেখানে গিয়েছিলাম শ্রমকল্যাণ দপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের ২৮ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করতে বলেন। কিন্তু আমাদের শ্রমিকরা সেটা মানবে না। তাছাড়া মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে ছিলেন না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বলেন, কাজ বন্ধ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে গেলে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষেরই ক্ষতি হবে। আমরা বিষয়টি সমাধানের জন্য বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা বৈঠক করেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২৮ আগস্ট তাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন। আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখতে বলেছেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সেটা মানেনি।
এদিকে চলমান এই অচলাবস্থা নিরসনে উভয়পক্ষকে চিঠি দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম অধিদপ্তর। শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনকে শ্রম আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি চা বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদ ও চা শ্রমিক ইউনিয়নকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, চা শিল্পের ভরা মৌসুমে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এবং চা শিল্পের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রচলিত প্রথা মেনে উভয়পক্ষকে বৈঠকে বসে মজুরি নির্ধারণ করার বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
তবে শ্রম অধিদপ্তরের দেওয়া এই চিঠির তীব্র বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল। তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকরা দুর্বল, তাই আমাদের এভাবে একটার পর একটা চিঠি দিয়ে চাপে রাখা হচ্ছে। অথচ বাগান মালিকদের ব্যাপারে তারা কোনো ধরনের সিদ্ধান্তই নিতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবারও বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে সমঝোতা বৈঠক হয়েছিলো সেখানেও বাগান মালিকরা ছিলেন না।
শ্রম আইন লঙ্ঘন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রম আইন যদি কেউ ভঙ্গ করে তাহলে সেটা মালিকপক্ষ করেছে। শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার একমাসের মধ্যে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। অথচ আজ ১৯ মাস পেরুনোর পরও মালিকপক্ষ নতুন করে চুক্তি করেনি। তাই শনিবার সকাল থেকে দেশের সকল চা বাগানে ধর্মঘট শুরু করেছি।
সূত্র: জাগো নিউজ