শিরোনাম
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ১৪ আগস্ট ঢাকা আসছেন। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবেন। সফরের প্রাক্কালে ব্যাচেলেট যাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে চাপ দেন, সেই আহ্বান জানিয়েছে ৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। এক বিবৃতিতে সংস্থাগুলো বলেছে, সফরকালে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমসহ গুরুতর সব নির্যাতন বন্ধে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিত ব্যাচেলেটের। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে বুধবার বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার সফরকালে সরকারি কর্মকর্তা এবং সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথাও রয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই সফরে যদি তিনি এই নির্যাতনের নিন্দা না জানান বা সংশোধনের আহ্বান না জানান, তাহলে শাসক দল আওয়ামী লীগ তার নীরবতাকে নিজেদের নিপীড়ন এবং অ্যাক্টিভিস্টদের দমনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শত শত বাংলাদেশিকে গুম, নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হতে হয়েছে। যদিও আগের সরকারগুলোর সময়েও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তবে গুম গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার শাসনকালের ‘হলমার্কে’ পরিণত হয়েছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ভিকটিমদের স্বজন, মানবাধিকারকর্মী ও তাদের পরিবার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে। হাইকমিশনার ব্যাচেলেটের উচিত বাংলাদেশ সরকারকে এসব গুম, নির্যাতন, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনে চাপ দেওয়া।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার স্পষ্ট করে জানানো উচিত যে, নিরাপত্তা বাহিনী যদি অব্যাহতভাবে এই নিপীড়ন চালিয়ে যায় তাহলে তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশি সেনাদের মোতায়েনকে হুমকিতে ফেলবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিবৃতিতে বলেছে, হাইকমিশনার এমন একসময়ে ঢাকা সফর করবেন যখন দেশটির সুশীলসমাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ বেড়েই চলেছে। সরকার অনেক সংস্থার ফান্ডিং আটকে দিয়েছে এবং মানবাধিকারকর্মীদের কার্যক্রম বন্ধে চাপ দিচ্ছে। মানবাধিকার কর্মী এবং সংস্থাগুলো যাতে স্বাধীনভাবে এবং ভয়হীন পরিবেশে কাজ করে যেতে পারে, সেটি নিশ্চিতে তাদের ওপরে চলমান সব হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানানো উচিত ব্যাচেলেটের।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং সরকার সমালোচকদের দমন এবং স্তব্ধ করতে ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং ২০০৬ সালের আইসিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এসব আইনের অধীনে করা মামলাগুলো চলছে। ফলে এর অধীনে অভিযুক্তরা অব্যাহতভাবে হেনস্তা হয়ে চলেছেন। ২০১৩ সালের এক আন্দোলনে সরকার অত্যধিক বল প্রয়োগ করছে বলে রিপোর্টের কারণে বিচারের মুখোমুখি করা হয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে। ২০২২ সালে সরকার অধিকারের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দেয় এবং অভিযোগ তোলে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুম নিয়ে সংস্থাটির প্রোপাগান্ডা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের কারণেই র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
হাইকমিশনার ব্যাচেলেটের উচিত প্রকাশ্যে উল্লেখ করা যে, সুশীলসমাজের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর এমন দমনপীড়ন ২০২৩ সালে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনকে হুমকিতে ফেলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দলকে বৈঠক এবং সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় সরকার বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এছাড়া বিবৃতিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের ওপরে চাপ দিতেও ব্যাচেলেটের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা সংস্থাগুলো হচ্ছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এন্টি-ডেথ পেনালটি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, ইলিওস জাস্টিস-মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এবং রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
সূত্র: যুগান্তর