সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন

ফানাম নিউজ
  ০৮ আগস্ট ২০২২, ০৭:৪৪

করোনার সংকট মোকাবিলা করে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সংকট মোকাবিলায় জোরালোভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে চীন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই আশ্বাস দেন। সম্প্রতি রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন। 

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সমুদ্রবিজ্ঞানে সহযোগিতা। এ ছাড়া বৈঠকে চীনের বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। বাণিজ্যবৈষম্য দূর করা নিয়েও দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে কথা হয়েছে।

চুক্তির আওতায় ইতিমধ্যে পিরোজপুরে অষ্টম বাংলাদেশ–চায়না মৈত্রী সেতু নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলা সহায়তার জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা স্মারকের নবায়ন, ২০২২-২৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সমঝোতা স্মারকের নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চীনের ফার্স্ট ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফির মধ্যে মেরিন সায়েন্স নিয়ে সমঝোতা স্মারক।

পরে সন্ধ্যায় ঢাকায় চীন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পারস্পরিক সহযোগিতা গভীর করার মধ্য দিয়ে তাঁরা সহযোগিতাকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে জিডিআই (গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বা বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার বিষয়েও দুই দেশ আলোচনা করেছে।

এর আগে সকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে চীনের বাজারে বাংলাদেশ ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে, যা আগে ছিল ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া চীনে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভিসার প্রক্রিয়া দু–এক দিনের মধ্যে শুরু করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

চীন পাশে থাকবে

এদিকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যে সুসম্পর্ক আছে, সেটিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চায় চীন। সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তাইওয়ানকে ঘিরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি তুলেছিলেন এবং চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।

তাইওয়ান বিষয়ে চীনকে সমর্থন দিলে অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের মতবিরোধ হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হচ্ছে—সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই চলছে বাংলাদেশ। তবে কেউ কেউ কমবেশি অসন্তুষ্ট হতে পারে। তাইওয়ান নিয়ে চীনকে সমর্থন দিলে কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ নীতি বজায় রাখবে।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৭টি প্রকল্পের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র আটটি প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে। মোট ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের কথা থাকলেও মাত্র ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার কথা আলোচনায় তুলেছিলেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিশেষ করে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। আলোচনায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ আসার পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানান, চীন রাখাইনে তিন হাজার বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পর তাদের খাবারের ব্যবস্থা করবে চীন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি।

‘এক চীন’ নীতি

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষিত গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের (জিএসআই) মতো উদ্যোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, তা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। চীন তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।

‘এক চীন’ নীতি নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করায় ওয়াং ই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।