শিরোনাম
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনার বটিয়াঘাটায় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমজাদ হোসেন হাওলাদারসহ ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এটি ট্রাইব্যুনালের ৪৭তম রায়।
রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
মোট তিনশ পৃষ্ঠার রায় দেওয়া হয়েছে। এর সার-সংক্ষেপ পড়েন তিন বিচারপতি।
আমজাদ হোসেন ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সহর আলী সরদার, আতিয়ার রহমান, মোতাছিম বিল্লাহ, কামাল উদ্দিন গোলদার ও নজরুল ইসলাম। এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম পলাতক।
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ঠিক করেন।
এর আগে গত ২২ মে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন আদালত। ওই দিন আসামি পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী এইচ এম তামিম ও আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মুখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হেলাল উদ্দিনসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি পেশ করেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করার পর মামলার আইও’র জেরার কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর মামলার তদন্ত শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে সাত ভলিউমের এক হাজার ২৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত চারটি অপরাধেই অভিযুক্ত হন আমজাদ হোসেন হাওলাদার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমজাদসহ অন্য ছয় আসামি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগ ও পরে জামায়াতের সমর্থক ছিলেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট আমজাদ হোসেন হাওলাদারসহ চার-পাঁচজন রাজাকার বটিয়াঘাটার মাছালিয়া গ্রামের শান্তি লতা মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিনোদ মণ্ডলকে অবৈধভাবে আটক-নির্যাতন, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর বটিয়াঘাটার পূর্বহালিয়া গ্রামের চাপরাশী বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র হরিদাস মজুমদারকে আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করেন আসামিরা।
তৃতীয় অভিযোগ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২১ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের চারজনকে হত্যা, চার-ছয়টি বাড়ির মালামাল লুট এবং অগ্নিসংযোগ করে আসামিরা।
চতুর্থ অভিযোগ: ১৯৭১ এর ২৯ নভেম্বরে আসামিরা বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিষ মণ্ডল ও আব্দুল আজিজকে গুলি করে হত্যা করে।