শিরোনাম
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা নিয়ে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করেছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস। এতে মূল মামলা নিয়ে অগ্রসর হতে বাধা নেই। এখন মামলাটির আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানে প্রতিবন্ধকতা থাকলে আইনি পথ অবলম্বন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় এবং ইসলামিক জোটের ওই সময়কার চেয়্যারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।’
ওআইসির মাধ্যমে গাম্বিয়া এই মামলা করেছে এবং গোটা বিষয়টিকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে বাংলাদেশকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের উচিত হবে দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনগত বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে গোটা বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়া।’
মামলাটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। পাশাপাশি গাম্বিয়ার রাজনৈতিক সমর্থনের প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’
তিনি বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, রোহিঙ্গারা যে গণহত্যার শিকার, সেটা প্রতিষ্ঠিত। সেজন্য তাদের বিষয়ে যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের জন্যও সমস্যা তৈরি হতে পারে।’
আইনগত ব্যবস্থা
২০১৯ সালে গাম্বিয়ার করা মূল মামলায় ছেদ পড়ে যখন মিয়ানমার এ বিষয়ে তাদের আপত্তি জানায়। আপত্তি খারিজ হওয়ার কারণে আদালতের এখন আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস’বিষয়ের শিক্ষক এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী কাওসার আহমেদ বলেন, ‘মূল মামলার আইনি যুদ্ধে এখন দুইভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। এর একটি লিখিত, অপরটি মৌখিক।’
আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উভয়পক্ষ তাদের লিখিত মেমোরিয়াল এবং কাউন্টার মেমোরিয়াল জমা দেবে। একইসঙ্গে অন্যান্য যাবতীয় নথিপত্রও জমা দেবে বলে তিনি জানান।
কাওসার আহমেদ বলেন, ‘কোর্টে চাক্ষুষ সাক্ষী বা বিশেষজ্ঞ উপস্থিত হয়ে সাক্ষী দিতে পারে। এছাড়া আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও খণ্ডন করবেন।’
তৃতীয় পক্ষ
সাম্প্রতিক ওই রায়ের একটা তাৎক্ষণিক ফলাফল হলো, যে সব রাষ্ট্র এ মামলায় অংশ নিতে চেয়েছিল, তারা এখন তা করতে পারবে ।
আইনজীবী কাওসার বলেন, ইতোমধ্যে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস এই মামলায় সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। তারা যদি চায়, কোর্টের মাধ্যমে এই মামলায় অংশ নিতে পারবে।
কতদিন চলবে
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বিষয়ে অভিজ্ঞ কাওসার বলেন, এর আগে ওই কোর্টে গণহত্যা বিষয়ক ‘বসনিয়া বনাম সার্বিয়া’ এবং ‘ক্রোয়েশিয়া বনাম সার্বিয়া’ মামলা দুটির রায় হয়েছিল যথাক্রমে ১৪ বছর ও ১৬ বছর পর।
কাওসার বলেন, ‘বসনিয়া মামলা করেছিল ১৯৯৩ সালে। রায় হয়েছিল ২০০৭ সালে। ক্রোয়েশিয়া মামলা করেছিল ১৯৯৯ সালে, রায় হয়েছিল ২০১৫ সালে। রোহিঙ্গা গণহত্য মামলায় কত সময় লাগতে পারে এটি এখন বলা মুশকিল।’
বিচারকদের অবস্থা
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে ১৫ জন বিচারকের নিয়োগ হয় ৯ বছরের জন্য। কিন্তু অনেক মামলা দীর্ঘদিন ধরে চললেও বিচার প্রক্রিয়ায় কোনও সমস্যা হয় না বলে জানালেন কাওসার আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আইসিজেতে ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত চমৎকার। ফলে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের মামলা সম্পর্কে জানতে অসুবিধা হয় না।’
এছাড়া, ওই কোর্টে যারা বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান, তারা বেশ দক্ষ হয়ে থাকেন। সেখানে এখন পর্যন্ত বিচারক পরিবর্তনের জন্য মামলার রায়ে প্রভাব পড়েছে, এমন অভিযোগ নেই।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন