শিরোনাম
করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণা করা হবে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ রায় ঘোষণা করবেন।
রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ডের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছি।
সাবরিনার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, সাবরিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি আমরা ন্যায়বিচার পাবো। একই মন্তব্য করে আরিফের আইনজীবী বলেন, আশা করছি রায়ে আরিফ খালাস পাবেন।
এর আগে, গত ২৯ জুন ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
গত ১১ মে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
গত ২০ এপ্রিল একই আদালতে সাক্ষ্য দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়া। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
২০২০ সালের ২৩ জুন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে জেকেজি হেলথকেয়ার। কিন্তু এসব নমুনা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হয়। এ অভিযোগে ওই দিনই অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে এ নিয়ে তেজগাঁও থানায় মামলা হলে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর একই বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবরিনা ও আরিফসহ আটজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও এবং জেবুন্নেসা।
চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূলহোতা বলে উল্লেখ করা হয়। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে জানানো হয়।
একই বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
কোন ধারায় কি সাজা
সাবরিনা চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে ১৭০/২৬৯/৪২০/৪০৬/৪৬৬/৪৬৫/৪৭১/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ ধারাগুলোর মধ্যে দণ্ডবিধি ৪২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড।
ধারা: ১৭০ (ভুয়া সরকারি কর্মচারী বলিয়া পরিচয় দেওয়া)
যদি কোনো সরকারি কর্মচারী হিসেবে বিশেষ সম্পত্তি ক্রয় বা ক্রয়ের জন্য দর কষাকষি না করতে আইনত বাধ্য থাকা সত্ত্বেও নিজের নামে অথবা অন্য কারো নামে অথবা যুক্তভাবে অথবা অন্যান্যের সঙ্গে অংশ নিয়ে উক্ত সম্পত্তি ক্রয় করেন বা ক্রয় করার জন্য দর কষাকষি করেন, তবে তিনি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে বিনাশ্ৰম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন এবং সম্পত্তিটি ক্রয় করা হয়ে থাকলে তা বাজেয়াপ্ত হবে।
ধারা: ২৬৯ (বিপজ্জনক কোনো রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে জেনেও অবহেলা করা)
কোনো ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলামূলকভাবে এমন কোনো কার্য করে, যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করে, তবে সেই ব্যক্তি ছয় মাস পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
ধারা: ৪০৬ (অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি)
কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে, তবে সে ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্ৰম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা: ৪২০ (প্রতারণা ও সম্পত্তি সমর্পণ করিবার জন্য অসাধুভাবে প্রবৃত্ত করা)
কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণা করে এবং প্রতারিত ব্যক্তিকে অসাধুভাবে অপর কোনো ব্যক্তিকে সম্পত্তির অংশ বা অংশবিশেষ প্রণয়ন, পরিবর্তন বা বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত করে অথবা অসাধুভাবে প্রতারিত ব্যক্তিকে এমন কোনো স্বাক্ষরিত বা সিল মোহরযুক্ত বস্তুর সমুদয় অংশ বা অংশবিশেষ প্রণয়ন, পরিবর্তন বা বিনাশ সাধনে প্রবৃত্ত করে, যা মূল্যবান জামানতে রূপান্তরযোগ্য, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রমের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
ধারা: ৪৬৫ (জালিয়াতির শাস্তি)
কোনো ব্যক্তি যদি জালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
ধারা: ৪৬৬ (আদালতের নথিপত্র বা সরকারি রেজিস্টার ইত্যাদি জালকরণ)
কোনো ব্যক্তি যদি এমন একটি দলিল জাল করে, যা কোনো বিচারালয়ের নথি অথবা প্রসিডিং কিংবা বিচারালয়ে উত্থাপিত নথি বা প্রসিডিং বলে অথবা কোনো জন্ম, খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ে কিংবা সমাধিকরণের রেজিস্টার বলে অথবা কোনো সরকারি কর্মচারী কর্তৃক সরকারি কর্মচারী হিসেবে রক্ষিত রেজিস্টার বলে অথবা কোনো সরকারি কর্মচারী দ্বারা তার সরকারি পদমর্যাদা বলে কৃত সার্টিফিকেট বা দলিল বলে, অথবা কোনো মামলা দায়ের করার বা উহাতে পক্ষ সমর্থনের কিংবা উহাতে কোনো কার্যক্রম গ্রহণের রায় মানার কিংবা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বলে প্রতিভাত হয়, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম কিংবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
ধারা: ৪৭১ (কোনো জাল দলিলকে খাটি হিসেবে ব্যবহার)
কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে এমন একটি দলিলকে খাটি দলিল হিসেবে ব্যবহার করে, যে দলিলটি একটি জাল দলিল বলে সে জানে বা তার বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, তবে সে ব্যক্তি যেন সে নিজে দলিলটি জাল করেছে, এমনভাবে দণ্ডিত হবে।