শিরোনাম
জমে উঠেছে রাজধানীর কুরবানির পশুর হাট। গরু, ছাগল, মহিষসহ সব ধরনের পশু বিক্রি হচ্ছে। তবে শুক্রবার ও শনিবার হাট পুরোপুরি জমে উঠার আশা করছেন ইজারাদার ও বিক্রেতারা।
শুক্রবার কমলাপুরের পশুর হাটে দেখা যায়, তেমন ক্রেতা নেই। তবে সন্ধ্যার পর থেকে হাটে ক্রেতার আগমন বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পরপরই একেকজনকে গরু কিনে বের হতে দেখা যায়। এর মধ্যে দুটি গরু ৬০ হাজার টাকা করে, একটি ৯০ হাজার টাকা, একটি এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, একটি এক লাখ ২২ হাজার টাকা এবং একটি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
হাট থেকে গরু নিয়ে বের হলেই মানুষের জিজ্ঞাসা-ভাই দাম কত? এজন্য ক্রেতাদের কেউ কেউ গরুর দাম লিখে প্ল্যাকার্ড ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ দাম জানতে চাইলে প্ল্যাকার্ড উঁচু করে ধরছেন। মেহেরপুরের গাংনি থেকে আক্কাস আলীসহ চারজন ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন তিন দিন আগে।
আক্কাস আলী বলেন, আমাদের একটি গরু বিক্রি হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার টাকায়। ভলোই লাভ হয়েছে বলে তিনি জানান। অন্যগুলো শুক্রবার বিক্রি করে দেওয়ার আশা করে তিনি বলেন, আর মাত্র দুদিন আছে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন পড়ায় ভালো হয়েছে। এতে হাটে ক্রেতা বাড়বে। বিক্রেতারাও গরু বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন। এ হাটে মুগদা থেকে গরু কিনতে এসেছেন আনিস রহমান।
তিনি বলেন, হাটে ছোট থেকে বড় সব ধরনের গরু আছে। দামও অনেক বেশি চাচ্ছে। বাজেট অনুসারে গরু মেলানো কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবছরই আগে দাম বেশি থাকে, পরে কিছুটা কমে। এজন্য আজকে দেখতে আসছি। কাল সময় নিয়ে ভালোভাবে যাচাই করে কিনে নিয়ে যাব।
আফতাব নগর ও মেরাদিয়া হাটে তেমন ভিড় দেখা না গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে হাট। আফতাবনগরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে গরু। দলে দলে হাটে প্রবেশ করছে শত শত মানুষ।
কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, আবার কেউ এসেছেন আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে। আফতাবনগর হাটে কথা হয় পাবনার স–রুজ আলী নামের এক গরু ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি জানান, ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় এক ট্রাকে ২টি ভারতীয় বোল্ডারসহ ৬টি গরু হাটে এনেছেন। তার গরুর ওজন ১৫-১৮ মন। তিনি জানান, অনেক দর্শনার্থী থাকলেও ক্রেতা কম।
এতদিনে মাত্র আড়াই লাখ টাকায় তার একটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি আশা করছেন শুক্রবার রাত থেকে বেচাকেনা বাড়বে। আফতাবনগর হাটে তথ্যকেন্দ্রে কর্মরত আপন ইসলাম ইপু বলেন, রাজধানীর আফতাবনগর হাটে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নাটোর, পাবনা ও ফরিদপুর এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি গরু আসছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে পুরো হাটজুড়ে তথ্যকেন্দ্র ছাড়াও ১২টি ইজারা কাউন্টার করা হয়েছে।
এতদিন তেমন ক্রেতা না থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে হাটে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। যা ঈদের রাত পর্যন্ত চলবে।
অপরদিকে, আফতাবনগর প্রজেক্টের বিপরীত পাশেই রামপুরা থানাসংলগ্ন বসেছে মেরাদিয়া পশুর হাট। সেখানেও গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। ১৬টি গরু নিয়ে আসা সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর এলাকার গরু ব্যবসায়ী কুতুব উদ্দিন জানান, ১৬টি গরুর মধ্যে তার দুটি গরু সবচেয়ে বড়।
১৮ মাস ধরে এগুলো পালন করেছেন। দুটি গরুর ওজন প্রায় ৪০ মন। তিনি বলেন, অনেকে দেখলেও কেউ তার গরুর দাম জানাচ্ছেন না। হাটে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাঝারি সাইজ বা তার থেকে একটু ছোট আকারের গরু খুঁজছেন। কিন্তু অনেক দাম চাইছেন বিক্রেতারা।
লাখ টাকার নিচে কোনো গরু মিলছে না। বনশ্রীর বাসিন্দা সফিউল ইসলাম বলেন, মাঝারি সাইজের ষাঁড় তিনি এক লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। বাজারে গরুর দাম একটু বেশি বলে তিনি মনে করেন।
ধোলাইখাল পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ হাটে কুরবানির পশু এনে রাখা হয়েছে। এখনো কেনাবেচা তেমনভাবে জমেনি। তবে বিক্রি আগের থেকে বেড়েছে। এ হাটে দেশীয় মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। তাই এ জাতের গরুর দাম তুলনামূলক বেশি।
ফরিদপুরের সদরপুর থানা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে ধোলাইখালে এসেছেন ব্যবসায়ী কুদ্দুস মাতব্বর। এর মধ্যে আগ্রহের কেন্দ্রে রাজা ও বাদশা। গরুর দুটির দাম হাঁকানো হচ্ছে ১২ লাখ ও ১০ লাখ টাকা। কুদ্দুস মাতব্বর বলেন, ১০ লাখ ও ৭ লাখ হলে বিক্রি করে দেব। বাজার দর কমও না আবার বেশিও না, স্বাভাবিক আছে। বাজারে ক্রেতা এখনো আশানুরূপ আসেনি। তবে শুক্রবার থেকে ক্রেতা বাড়তে পারে বলে তিনি আশা করেন।
এই হাটে গরু কিনতে আসা আকবর আলী বলেন, বাজারে গরুর দাম বেশিই মনে হচ্ছে। বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন। আমি মাঝারি দেশি গরু কিনব। ফার্মের গরুতে পুষ্টিগুণ নিয়ে সন্দেহ আছে। কুষ্টিয়া থেকে মদন নামে দুটি গরু নিয়ে এসেছেন সিরাজুল। একেকটির দাম চাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা করে।
একসঙ্গে ১৩ লাখ হলে দুটিই বিক্রি করে দেবেন। তিনি বলেন, পরশুদিন গরুগুলো নিয়ে ঢাকায় এসেছি। এখনো একটি গরু বিক্রি হয়নি। বিক্রি করব কার কাছে, ক্রেতাই তো দেখা যাচ্ছে না। ঈদের দুদিন বাকি আছে।
রাজধানীর দনিয়া এলাকার শনির আখড়া হাট থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে সাদা-কালো রংয়ের একটা গরু কিনেছেন আব্দুল হাদীদ। তার মতে, গরুর দাম কিছুটা বেশি। তবে সেটা সহনীয়। তিনি বলেন, এ হাটে গরুর দাম একটু বেশি। কিন্তু সেটা অস্বাভাবিক নয়। দাম যাই হোক, গরু পছন্দ হয়েছে, এটাই বড় কথা।
হাটের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার কিছুটা বাড়তি দামে গরু বিক্রি হচ্ছে। এর পেছনে তারা গবাদি পশুর খাদ্যের বাড়তি দামকে দায়ী করেছেন।
সন্ধ্যা থেকে এ হাটে ঘুরে মাঝারি ধরনের গরু বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাতুয়াইল থেকে হাটে এসেছেন ইরতিজা হাসান। দুটি গরু কিনেছেন তারা। একটির দাম ২ লাখ ৩০ হাজার, অন্যটি ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ইরতিজা বলেন, গরুর দাম ব্যাপারীরা একটু বেশিই চান। গত বছর যে গরু ছিল ২ লাখ, এবার সেটা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই। গরু তো কিনতেই হবে। তাই দর কষাকষি করে দুটো গরু কিনেছি।
সূত্র: যুগান্তর