যুদ্ধের মধ্যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘন: প্রধানমন্ত্রী

ফানাম নিউজ
  ০৭ জুলাই ২০২২, ১৮:৫১

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমি মনে করি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কখনো কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। তার প্রভাব তার নিজেদের দেশের ওপরও পড়ে। কাজেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া এবং পণ্য পরিবহন (স্বাভাবিক রাখা দরকার), আর যুদ্ধ যাদের করার করতে থাকেন। কিন্তু পণ্য পরিবহন বা আমদানি-রপ্তানি এটা তো সহজভাবে হওয়াই উচিত, সাধারণ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ খাদ্যটা মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। আর সেখানেই সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশও।

বৃহস্পতিবার (৭ জুলঅই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮ তলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধ কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে যখন সারাবিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, ঠিক সেই সময়ে ইউক্রেন এবং রাশিয়া যুদ্ধে জড়ায়। এতে বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরও করুণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এর ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে বা যেগুলি আমরা আমদানি করি সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু বাধাই না, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা যেখানে প্রয়োজনীয় পণ্য পাবো সে প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশে না, আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে সারাবিশ্ব প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা আসলে সবার, অন্তত উন্নত দেশগুলির বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকাকেই বিবেচনা করা উচিত তারা যে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও যে কষ্ট পাচ্ছেন। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ- সব দেশের মানুষই, যারা নিম্ন আয়ের সব দেশগুলি কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, করোনা মহামারি থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার পাচ্ছিলাম। তখনই এই যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞা। এটা সত্যি আমাদের জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যেটা খবর পাই বিভিন্ন দেশ থেকে, আমাদেরও অনেক লোক সেখানে বসবাস করেন। প্রত্যেকের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কী অর্থ থাকতে পারে আমরা ঠিক জানি না। এখানে আমি বলবো, একদিক থেকে বলতে গেলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মানুষের যে অধিকার আছে সে অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমরা আশা করি যে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া- এখান থেকে সরে আসাটাই বোধহয় বাঞ্চনীয়। সবাই সেটাই চাইবে- আমি এটা মনে করি।

এ সময় করোনাভাইরাসের কারণে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে বলে জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি করছে। আশা করি এই বিষয়টা উন্নত দেশগুলি একটু দেখবে। জলবায়ুর অভিঘাত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি- আমরা যাতে বাঁচতে পারি সেটাও সবাই দেখবেন সেটাই আমরা চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় আমি একটু না বললে নয়, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুটা। আমরা মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটা বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটা বিরাট বোঝা। একে তো এই করোনাভাইরাস, তার ওপরে যুদ্ধ- এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলি যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের এই সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপরে এই আরেকটা বোঝা টানা যে কত কষ্টকর- সেটা সবার উপলব্ধি করা উচিত।

তিনি বলেন, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এবং দেশগুলি যদি আর একটু সক্রিয় হয়ে এই রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে, তাদের ছেলে-মেয়েরা যেন তাদের নিজের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে, এভাবে ক্যাম্পের জীবন-যাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সবাই একটু সক্রিয় হবেন সেটাই আমি আশা করি।

কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে সমস্যাগুলো ছিল সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি বলে জানান সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক কূটনীতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। পৃথিবীটা একটা গ্লোবাল ভিলেজ। আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সেভাবেই আমাদের কাজ করতে হবে যে সবার সঙ্গে মিলে আমরা কাজ করবো যাতে মানুষের উন্নতি হয়। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমার দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে আমরা আমাদের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য যতটুকু আছে আমরা সেইভাবেই চলতে চাই। আমরা অহেতুক কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নেই না। একটা কাজ করলে মানুষ কতটা লাভবান হবে, আমরা যেন কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারি, আত্মমর্যাদাশীল থাকতে পারি এবং আমরা যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে চলতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এটা গুরুত্ব দিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

সূত্র: জাগো নিউজ