স্বপ্ন ছোঁয়ার ক্ষণ গুনছেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষ

ফানাম নিউজ
  ২৪ জুন ২০২২, ১৯:৪৭

ফেরি, লঞ্চ, স্পিড বোট কিংবা ট্রলারে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দেওয়ার দিন শেষ হচ্ছে। স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে ভোগান্তি ছাড়াই দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ পাড়ি দেবে পদ্মা। এতে সময়ও বাঁচবে আগের তুলনায় অর্ধেকেরও বেশি। স্বপ্নসেতুকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনার অভাব নেই পদ্মাপাড়ের মানুষের।

মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে নিতে হবে ঢাকায়। শরীয়তপুরের মাঝির ঘাটে এই স্পিড বোটই একমাত্র ভারসা। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রমত্তা পদ্মা পাড়ি দিতে হচ্ছে। মাঝির ঘাট কিংবা কাঁঠালবাড়ি ঘাটের নিত্যদিনের দৃশ্য এটি।

তবে স্পিড বোটে পদ্মা পাড়ি দেওয়া মেয়েটির জীবনে কী ঘটেছে, তা জানা নেই। তাকে বহনকারী বোট পদ্মার বুকে দৃষ্টিসীমায় যতটা অস্পষ্ট হয়েছে, ঠিক সেখানেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু।

ঢাকা থেকে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর আর গোপালগঞ্জ—এসব জেলার দূরত্ব মাত্র ৫০ থেকে ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে। এই পথ পাড়ি দিয়ে এত দিন ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে চার থেকে ১০ ঘণ্টা, কোনো কোনো সময় তা আরও বেশি।

এক নারী যাত্রী বলেন, আমরা দ্রুত ঢাকা যেতে পারব। স্পিড বোটে যে ঝুঁকি থাকে, সেতু হলে সে ঝুঁকি থাকবে না।

অপর যাত্রী বলেন, নদী পারাপার হওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। সেতু হওয়া আমাদের জন্য খুবই একটি আনন্দদায়ক বিষয়।

অথচ পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা থেকে দ্রুতগতির মহাসড়ক ধরে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছানো যাবে। পদ্মার ওপাড়ের পাঁচ জেলার মানুষ চাইলে ঢাকায় না থেকেও চাকরি কিংবা ব্যবসা করতে পারবে।

একজন বলেন, নদী পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেছি। দুই থেকে তিন দিনও ঈদের সময় লেগে গেছে। এটা অনেক বড় ভোগান্তি ছিল। এই অশান্তি থেকে আমরা মুক্তি পাব।

জনভোগান্তি কমিয়ে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে জানান সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান।

তিনি বলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটা কী অবস্থায় আছে, তা চিন্তা করতে হবে। ওই সড়ক নেটওয়ার্কটা ফ্রি রাখতে হবে, যেন যে গাড়িগুলো ঢাকায় ঢুকবে, সেগুলো যেন নিচের দিক থেকে আসতে পারে। এর কারণেই যাত্রাবাড়ী-ডেমরা রাস্তাটি করা হয়েছে।

এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগালে সড়ক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে বিল্পব ঘটবে বলে মনে করেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হোক বলেন, নিজের সক্ষমতায় যাতায়াতের সময় ও খরচ যদি কমাতে চাই, তাহলে ট্রান্সপোর্ট করিডরকে আমাদের অর্থনৈতিক করিডরকে নিয়ে সেই ধরনের সক্ষমতা আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যের সহায়তা ছাড়াই নিতে পারব, সেটার সুবর্ণ সুযোগ দেখতে পাচ্ছি। এখানে সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনোযোগী হতে হবে।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার সেই সোনালী অধ্যায় শুরুর অপেক্ষায় এখন পুরো জাতি।

শত দুর্ভোগ, আর ভোগান্তির দিন শেষ হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের। পদ্মার বুকে দৃশ্যমান এই পদ্মাসেতুর দ্বার খুলতে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্য। আর তাতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষেরা।

সূত্র: আরটিভি