শিরোনাম
রাজধানীর জুরাইনে মোটরসাইকেল আরোহী এক দম্পতির সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ পুলিশ সদস্যদের ওপর স্থানীয় লোকজনের হামলার ঘটনায় ৪৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গত রাতে তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাড়ে চারশো জনের বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন।
জানা গেছে, আজ সকালে বার্তা বিচিত্রা ডটকম নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রকাশক সোহাকুল ইসলাম রনি ও তার স্ত্রী ওই সংবাদমাধ্যমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইয়াছিন জাহান নিশান মোটরসাইকেলে করে কোথাও যাচ্ছিলেন। এ সময় নিশানের মাথায় হেলমেট না থাকায় ট্রাফিকের একজন সার্জেন্ট মোটরসাইকেলটি থামান। এরপর তাদের মাঝে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট নিশানের গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ উঠে। তখনই এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তারা পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতরা হলেন, সার্জেন্ট আলী হোসেন, ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম ও শ্যামপুর থানার উপপরিদর্শক উৎপল চন্দ্র। এদের মধ্যে আলী হোসেনের অবস্থা গুরুত্বর। তার হাতে ২১টি সেলাই লেগেছে।
পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষের একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায় পুলিশ সার্জেন্ট কাগজপত্র চাওয়ায় তিনিও (রনি) পুলিশ সার্জেন্টকে কাগজপত্র বের করতে বলেন। এ সময় চড়া গলায় সার্জেন্ট বলেন, তিনি পুলিশের পোশাক পরে আছেন, তার হাতে ওয়াকিটকি রয়েছে। তার অন্য কোনো পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। নিশানকে বলতে শুনা যায়, ‘আমার গায়ে হাত দিলেন কেন?’ এর পরপরই লোকজন জড়ো হতে থাকেন।
মিজানুর রহমান নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, পুলিশের চাঁদাবাজি নিয়ে স্থানীয় লোকজন বিরক্ত। আজ মূলত তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
স্থানীয় লোকজন যখন পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছিলেন, ওই সময় রনি ও তার স্ত্রীকে ঘটনাস্থলের পাশের পুলিশ বক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেসবুকে লাইভ করেন রনি। তাকে বলতে শোনা যায়, দেশের জনগণ দেখেন, যারা প্রত্যেকদিন জুরাইনে চাঁদাবাজি করে, চাঁদাবাজি করার সময় আমার সঙ্গে কথা হয়। আমার সঙ্গে অসদাচরণ করে। একপর্যায়ে আমাকে মারধর করে। কোন আইনে আছে মারধর করা যাবে? কেন আপনি মারলেন? এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন তার ছেঁড়া শার্টের কোনা তুলে দেখান। তখন রনি বলেন, এটা তো জনগণ ছিঁড়েছে। আপনারা কিছু বলবেন? আমাকে শাবল দিয়ে জীবননাশের চেষ্টা করেছেন। (তিনি শাবলটি দেখান)। ট্রাফিকের কোন আইনে আছে? গাড়ির লাইসেন্স দেখানোর পর সে আমার থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। এই যে গাড়ির লাইসেন্স। টাকা দিতে অস্বীকার করি, তখন তারা আমাকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। উত্তেজিত জনতা কীভাবে তাদের থানা ভাঙচুর করছে দেখেন।’ এ সময় ভিডিওতে ভাঙচুরের শব্দ শোনা যায়। তখন তিন পুলিশ সদস্য পুলিশ বক্সের এক কোনায় আশ্রয় নেন।
এ বিষয়ে শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল ইসলাম বলেন, ওয়ারীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে আসা মোটরসাইকেল আরোহীকে আটকে কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করতে আসা আরও দুই পুলিশ সদস্যকেও মারধর করে আসামিরা। আহত সার্জেন্ট আলী হোসেনের হাতে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।এ ঘটনায় মো. রনিসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইয়াছিন জাহান নিশানের চাচাতো ভাই আহমেদ মোস্তফা রাতুল বলেন, আজ সকালে আমার চাচাতো বোন নিশান ও তার স্বামী অফিসে যাওয়ার সময় একজন ট্রাফিক সার্জেন্টের সাথে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট আমার অন্ত:সত্তা বোনের গায়ে হাত তোলেন। এরপর স্থানীয় জনতা তাদের ওপর চড়াও হয়।এ ঘটনায় ইয়াসির আরাফাত, ইয়াসিন জাহান নিশান, সোহাকুল ইসলাম রনি, মোঃ নাহিদ, মোঃ শরীফকে আটক করেছে পুলিশ।
সূত্র: আরটিভি