আজ জাতীয় চা দিবস

ফানাম নিউজ
  ০৪ জুন ২০২২, ১০:৫৮

জাতীয় চা দিবস আজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন প্রথম বাঙালি হিসেবে তৎকালীন চা বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতার পর দেশের চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ৪ জুন চা দিবস ঘোষণা করেছে চা বোর্ড। দেশে দ্বিতীয়বারের মতো দিবসটি উদযাপন করা হবে আজ শনিবার।

দিবসটি উপলক্ষে আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যাত্রায় চা শিল্পের অবদান আরও বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চা বোর্ডসহ চা শিল্পসংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, চা রপ্তানির অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
 
সুদীর্ঘ ১৮০ বছর ধরে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে চা শিল্প গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। দেশের সাধারণ মানুষের সামাজিকতা, সংস্কৃতি ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে চা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দেশে চায়ের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে উৎপাদনও।

একই সঙ্গে চায়ের উৎপাদন, গুণাগুণ ও ঘ্রাণে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন উদ্ভাবন। তবে এবারের চা দিবসে চা রপ্তানির হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনা এবং চায়ের গুণগত মান আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন চা শিল্পসংশ্লিষ্টরা।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এবং চা শিল্পসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষের শুরু হয়। তারপর থেকে গড়ে উঠে নতুন নতুন চা বাগান, বাড়তে থাকে উৎপাদন। ধীরে ধীরে চা হয়ে উঠে সবার পছন্দের পানীয়। দেশে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫৩টি চা বাগান ছিল। তখন পর্যন্ত চায়ের বার্ষিক উৎপাদন ছিল প্রায় ৩২ দশমিক ৪২ মিলিয়ন কেজি। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে চা বাগানের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে দেশে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। এর বাইরে ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের সংখ্যা আট হাজারেরও বেশি।

সর্বশেষ গত বছর চায়ের উৎপাদন হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫১ মিলিয়ন কেজি। ধারাবাহিকভাবে চায়ের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও বেড়েছে। এই উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিশাল এক চা জনগোষ্ঠী নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। একই সঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে চায়ের উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধির কাজও চলছে।

চা বোর্ড বলছে, ইতিমধ্যে নতুন ও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা বাড়ানো হয়েছে। কৃষকদেরও চা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতদিন শুধু পাহাড়ি অঞ্চল অর্থাৎ চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সিলেটে চা উৎপাদিত হতো। এখন দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাটের সমতল ভূমিতেও চা উৎপাদিত হচ্ছে। এতে অন্য ফসল চাষের অনুপযোগী জমিগুলোতে চা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বে আট জাতের চা আছে। বাংলাদেশে আছে ছয় জাতের। এসব জাতের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্ল্যাক টি, যা প্রায় সবাই পান করেন। এরপর রয়েছে গ্রিন টি, যা ২০১৬ সাল থেকে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বাজারজাত শুরু হয়েছে। ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় দিন দিন গ্রিন টির চাহিদা বাড়ছে।

এছাড়াও আছে সীমিত পর্যায়ের হোয়াইট টি, ইয়েলো টি ও ওলং টি। বর্তমানে গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে আরও কয়েক ধরনের ক্লোন টি। যা অবমুক্তির প্রক্রিয়ায় আছে। এগুলোর মধ্যে খরায় ভালোভাবে টিকে থাকার উপযোগী খরা প্রতিরোধী চা গাছ ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু চা গাছ রয়েছে। এগুলো বাগানের স্যাঁতসেঁতে, পানি জমে থাকে এমন জমিতেও চাষ করা যাবে। আগামী বছর চা দিবসে এই ক্লোনজাত চাগুলো অবমুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর