ডাকাতির কাজে সিআইডির গাড়ি ব্যবহার করতেন বরখাস্ত এসআই আকসাদুদ

ফানাম নিউজ
  ৩০ মে ২০২২, ১০:০৪

২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর বিদেশগামী এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়া সিআইডির সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আকসাদুদ জামান নামে ওই কর্মকর্তা সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) বিভাগে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। লুটের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের আগেই তাকে বরখাস্ত করা হয়।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ সম্প্রতি আকসাদুদসহ নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে ওই অভিযোগপত্র দেয়।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, এসআই আকসাদুদ জামান ডাকাতিতে ব্যবহার করতেন সিআইডির গাড়ি। চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যসহ নয়জনকে নিয়ে তিনি ডাকাতের দল গড়ে তুলেছিলেন। এসআই আকসাদুদের বিরুদ্ধে হওয়া ডাকাতির মামলার অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

রোববার (২৯ মে) গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কায়সার রিজভী কোরায়েশি অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগপত্রভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আকসাদুদ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) কর্মরত থাকাকালে ব্যক্তিগতভাবে তার নিয়োগ করা রাইটার মোশাররফ হোসেন, চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য হাসান রাজা, ডাকাত চক্রের সদস্য সেলিম মোল্লা, রিপন মোড়ল, আমির হোসেন তালুকদার, রিজু মিয়া শিকদার, মনির হোসেন ও মিলন মিয়া। এদের মধ্যে মনির ও মিলন পলাতক। আকসাদুদসহ সাতজন গ্রেফতার হলেও সম্প্রতি কারাগার থেকে তারা জামিনে মুক্ত হন।

এছাড়া চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য হাসান রাজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আসামিদের মধ্যে হাসান রাজার বিরুদ্ধে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তিনটি এবং সেলিম মোল্লার বিরুদ্ধে চারটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। আরেক সহযোগী রিপন মোড়ল মাদারীপুরে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সিআইডি কর্তৃপক্ষের অগোচরে আকসাদুদ সিআইডির গাড়ি ডাকাতিতে ব্যবহার করতেন। সিআইডি কর্তৃপক্ষ মাসিক চুক্তিতে এ গাড়ি ভাড়া করেছিল।

ডাকাতির ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৮ আগস্ট আকসাদুদকে সাময়িক বরখাস্ত করে সিআইডি। পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আকসাদুদের স্ত্রীর সঙ্গে এক ব্যক্তির এক কোটি ২৮ লাখ ও ১৪ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের অডিও ছড়িয়ে পড়ে এবং তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ডাকাতির ঘটনার একবছর পরে ৮ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে আকসাদুদকে গ্রেফতার করে ডিবি।

গ্রেফতারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, আকসাদুদ জামানকে আগেই বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ডাকাতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। পরে ডিবির তদন্তেই তার নাম বেরিয়ে আসে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর সকাল পৌনে সাতটায় ভুক্তভোগী বিদেশগামী এক ব্যক্তি টিকাটুলির বাসা থেকে সিএনজিযোগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বের হন। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তিনি কাওলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে পৌঁছালে একটি মাইক্রোবাস সিএনজিটির গতিরোধ করে। এরপর মাইক্রোবাস থেকে দুইজন নেমে ডিবি পরিচয়ে ভুক্তভোগীকে তার লাগেজসহ মাইক্রোবাসে তুলে নেন।

পরে ভুক্তভোগীকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার ইউএস ডলার, দুই হাজার দিরহাম, দুই হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসেটসহ কাপড়চোপড় ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ভুক্তভোগীকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি দস্যুতার মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

সূত্র: জাগো নিউজ