শিরোনাম
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ প্রথম কাজ শুরু করে ১৯৮৮ সালে। ওই সময় ইরাক ও নামিবিয়ায় দুটি অপারেশনে অংশ নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় কুয়েত ও সৌদি আরবে ২ হাজার ১৯৩ জন সেনা সদস্য পাঠানো হয়েছিল। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ২৫টি দেশে ত্রিশটির বেশি মিশনে অংশ নেয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের অংশগ্রহণ ১৯৮৯ সালে। এ পর্যন্ত ২১টি দেশের ২২টি মিশনে ২০ হাজার ৭৯৪ জন পুলিশ সদস্য অংশ নেন। শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের ১৬০ জন সদস্য মারা গেছেন। ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. ফয়জুল করিমের মৃত্যু হয়। তিনি হলেন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী প্রথম বাংলাদেশি অফিসার, যিনি বিদেশে মিশনে মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রে জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৮ জন সদস্য বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত হয়েছেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৯ জন সদস্য। ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় শান্তিরক্ষী বাহিনীর ১৫ জন বাংলাদেশি সেনা নিহত হন। ২০০৫ সালে কঙ্গোতে ৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন ঘটনায় এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ২৪০ জন সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ৬ হাজার ৩২৪ জন সদস্য মিশনে কর্মরত আছেন। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর ৩৭১ জন নারী সদস্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর ৪৩ জন নারী সদস্য মিশনে অবস্থান করছেন। নয়টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন। জাতিসংঘের মিশনে আরও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী পাঠাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
সূত্রমতে, যেসব দেশের মিশনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে নামিবিয়া, কাম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, সাবেক জুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়রোলিয়ন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, ইথিওপিয়া প্রভৃতি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচজন নারী কর্মকর্তা সিভিলিয়ান পুলিশ অফিসার হিসাবে প্রথম ২০০০ সালের পূর্ব তিমুর মিশনে যোগ দেন। আমেরিকার দেশ হাইতি মিশনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি) রখফার সুলতানা খানমের নেতৃত্বে পুলিশের প্রথম নারী ইউনিট জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়। ওই দলটি সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে। দারফুর মিশনে ২০০৮ থেকে ২০২১ সালে মিশন শেষ হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে একটি নারী ফর্মড পুলিশ ইউনিট কঙ্গোতে কাজ করছে। ২০১১ সাল থেকে ওই দলটি নিয়োজিত আছে। বিভিন্ন মিশনে পুলিশের ৫০১ জন সদস্য নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য ১৪৮ জন। বিশ্ব শান্তিরক্ষার এ কার্যক্রমে পুলিশের ২১ জন সদস্য নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন। ২০১৯ সালে কঙ্গো মিশন পরিদর্শনকালে তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি রওশন আরা বেগম মারা যান।
আইএসপিআর জানায়, আজ সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহিদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় ও আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হবে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এছাড়া সকালে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২২’ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।