দেশের পথে আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ

ফানাম নিউজ
  ২৮ মে ২০২২, ০৯:১০

প্রয়াত সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গীতিকার আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার পথে রওনা হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টার দিকে গাফফার চৌধুরীর মরদেহটি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে (বিজি ২০২) ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানায় যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন।

বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে (বিজি ২০২) আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহটি পাঠানো হয়। মরদেহ শনিবার (২৮ মে) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে।ফ্লাইটে মরহুম আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

মরদেহ বিমানে তোলার সময় হিথ্রো এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন সাইদা মুনা তাসনিম।

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরহুম গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহটি গ্রহণ করবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে তার মরদেহ জাতীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় তার মরদেহ জাতীয় প্রেস ক্লাবে নেওয়া হবে। বিকেল সাড়ে ৫টায় তার মরদেহ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

এর আগে ১৯ মে স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল গাফফার চৌধুরী।

'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন- মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।

১৯৫০ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী পরিপূর্ণভাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে আবদুল গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান আবদুল গাফফার চৌধুরী। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন তিনি। এ সময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে দৈনিক জনপদ বের করেন।

এরপর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান আবদুল গাফফার চৌধুরী। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনে যান তিনি। এরপরই তার প্রবাস জীবনের ইতিহাস শুরু হয়।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশি’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘একজন তাহমিনা’ ‘রক্তাক্ত আগস্ট’ ও ‘পলাশী থেকে বাংলাদেশ’।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।

সূত্র: আরটিভি