শিরোনাম
অনিশ্চয়তার অমানিশা পার করে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঠিকানায় ঠাঁই পেয়েছে ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৪০টি পরিবারের ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ২০০ মানুষ। এ প্রক্রিয়ায় ২ কোটি মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দেবে সরকার।
একটু মাথা গোজার মতো ঠাঁই না পেয়ে রাস্তা কিংবা বস্তির খোলা আকাশের নিচে কিংবা প্রখর রোদ্দুরে শিশুসন্তান নিয়ে যে পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছিল, সেই সব পরিবার এখন পাকা ঘরে বসবাসের সুযোগ পেয়ে আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হয়েছে এসব ঘর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর জন্য স্থানীয় সরকারি কর্মচারীদের দায়ী করেছেন স্থানীয় রাজনীতিকেরা। তবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিঞা বলেন, অল্প কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম পাওয়া গেছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত করা হয়নি এমন কোনো জায়গা থেকে যদি অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভালো কাজে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। সেটিকে বড় করে না দেখে এত মানুষকে প্রধানমন্ত্রী যে আশ্রয় করে দিচ্ছেন, সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, গৃহহীনদের ঠিকানা ‘ঘর ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা’ দেওয়ার জন্য বেহাত হওয়া ৫ হাজার ৫১২ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যার স্থানীয় মূল্য ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। এছাড়া জমি কিনেও ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এমন জমির পরিমাণ ১৬৮ একর।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব ফেরদৌস আহমেদ জানান, ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন পরিদর্শন করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার দানকৃত জমিতে প্রথম পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হয়। ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনকবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘আশ্রয়ণ’নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত ৭ লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এসব গৃহহীন পরিবার ২ শতাংশ করে জমি পেয়েছে। একটি আধা পাকা দুই কক্ষের ঘর পেয়েছে। ঘরে রয়েছে গোসলখানা, টয়লেট ও রান্নাঘর। গৃহসহ জমি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে যৌথভাবে দলিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো হচ্ছে। প্রতি ১০টি পরিবারের সুপেয় পানির জন্য দেওয়া হয়েছে একটি করে নলকূপ। আশ্রয়ণের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের শরীর গঠন ও বিনোদনের জন্য প্রকল্প এলাকায় রয়েছে খেলার মাঠ। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক গ্রামের সব নাগরিক সুবিধাই রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে।
উপকারভোগীদের সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পেশামুখী প্রশিক্ষণ। বিশেষ করে ব্যারাকে বসবাসকারী সুবিধাভোগীদের মৎস্য চাষ, পাটি বুনন, নার্সারি, নকশিকাঁথা, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক ওয়্যারিং এবং রিকশা-সাইকেল-ভ্যান গাড়ি মেরামতের মতো নানা পেশায় প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। আয়বর্ধনকারী ব্যবসা বা পেশা চালুর জন্য ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাচ্ছে। ব্যারাকে পুনর্বাসিত পরিবারপ্রতি প্রাথমিকভাবে তিন মাসের ভিজিএফের আওতায় খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন, বয়স্ক, বিধবা বা অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতাপ্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন তারা। অর্থাৎ, একজন নিঃস্ব ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মানবসম্পদে পরিণত করে আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
সূত্র: ইত্তেফাক