সমকামী যৌনচক্র থেকে ছড়িয়েছে মাঙ্কি ভাইরাস!

ফানাম নিউজ
  ২০ মে ২০২২, ২০:২৪

আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে ক্রমেই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এবার ভাইরাসের সংক্রমণ-পথ চিহ্নিত করতে, বিভিন্ন ‘বার’ ও ‘সনা’য় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাদের আশঙ্কা মূলত সমকামী ও উভকামী পুরুষদের যৌনচক্র থেকেই ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ।

গত ৭ মে প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর হদিশ মেলে লন্ডনে। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি নাইজেরিয়া থেকে ফিরেছিলেন। তাই বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, আফ্রিকাতেই কোনও ভাবে ওই ব্যক্তি এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসেন। কিন্তু তার পর কীভাবে আরও ছয় জন এই রোগে সংক্রমিত হলেন, তা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না বিশেষজ্ঞরা।

ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, নতুন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ছয় জন সমকামী ও উভকামী পুরুষ। সম্প্রতি পুরুষ সঙ্গীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন এই ছয় জনের প্রত্যেকেই। শুধু ব্রিটেন নয়, স্পেন ও পর্তুগালে যথাক্রমে ৭ ও ৯ জন পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে, যাদের অধিকাংশই সমকামী কিংবা উভকামী পুরুষ বলেই জানা গেছে। তাই সমকামী পুরুষদের আপাতত অতিরিক্ত সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা।

বিশ্বজুড়ে মাঙ্কিপক্স আতঙ্ক

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মাঙ্কি পক্স। বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস হানা না দিলেও পর্তুগাল, স্পেন, ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ৭ মে লন্ডনে প্রথম এক ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কি পক্সের ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি নাইজেরিয়ায় গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। সেখানেই কোনও ভাবে আক্রান্ত হন বলে ধারণা করা হয়েছিল।

সরকারিভাবে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য দপ্তর এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১৯ মে) পর্তুগাল জানিয়েছে, দেশটিতে পাঁচজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া স্পেনে ২৩ জনের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য জানিয়েছে, তাদের এক বাসিন্দা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি কানাডা সফর শেষে দেশে ফেরেন।

২০২০ সালে কঙ্গো, নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল।

কী এই রোগ?

চিকিৎসকরা বলছেন, এটি এক বিশেষ ধরনের বসন্ত রোগ। প্রাণীদেহের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, ইঁদুরের মাধ্যমে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। নাক, মুখ, চোখের পাশাপাশি আক্রান্তের পোশাক থেকেও সংক্রমিত হতে পারে এই ভাইরাস। এই ভাইরাসটি খুবই সংক্রামক বলে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এক বিশেষ ধরনের বসন্ত। জলবসন্ত বা গুটিবসন্তের প্রতিকার থাকলেও এই ভাইরাস এতই বিরল যে, এখনো পর্যন্ত এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি জানতে পারেননি চিকিৎসকরা।

মূলত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার কিছু দেশে এই ভাইরাসের খোঁজ মেলে। তবে নাম ‘মাঙ্কিপক্স’ হলেও একাধিক বন্যপ্রাণির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। এটি সবচেয়ে বেশি ছড়ায় ইঁদুরের মাধ্যমে।

কতটা সংক্রামক এই ভাইরাস?

মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বাড়তে পারে সংক্রমণের আশঙ্কা। শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনও ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। অন্তত বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে এটাই ধারণা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, সঙ্গমের মাধ্যমেও একে অপরের শরীরে হানা দিতে পারে এই ভাইরাস। আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক মিলনেও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

কীভাবে চিনবেন এই ভাইরাস?

কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, গায়ে হাত পায়ে ব্যথার মতো কিছু প্রাথমিক উপসর্গতো রয়েছেই। এছাড়াও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। শরীরে ছোট ছোট অসংখ্য ক্ষতচিহ্নের দেখা মেলে। ক্রমশ সেই ক্ষত আরও গভীর হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গুটি বা জল বসন্তের সঙ্গে মাঙ্কি পক্সের উপসর্গের দিক থেকে সাদৃশ্য থাকায় অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগকে বসন্ত বা চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন।

চিকেন পক্সের সঙ্গে এর পার্থক্য কী?

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস অনুসারে, মাঙ্কিপক্সকে অনেকেই চিকেন পক্স বলে ভুল করছেন। চিকেন পক্সের মতো মাঙ্কি পক্সের ক্ষেত্রেও শরীরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে। ফ্লুইড যুক্ত এই ফুসকুড়িগুলো পরে ত্বকে দাগেরও সৃষ্টি করছে। উপসর্গগত সাদৃশ্য থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কি পক্স সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস। চিকেন পক্সের মতো রোগের প্রতিকার থাকলেও এই বিরল রোগ নিরাময়ের এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নেই বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।