শিরোনাম
ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে টাঙ্গাইলে। এতে করে জেলার ১২টি উপজেলার পাকা-আধা পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অতিমাত্রার বৃষ্টিতে জমিতেই ভাসছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। একদিকে শত শত হেক্টর জমির পাকা ধান তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মজুরিতেও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক। ফলে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকের চোখে-মুুখে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাঁটু পানিতে নেমে ধান কাটছে কৃষক। কেউ কেউ নৌকাযোগে উঁচু স্থানে তুলছে ধান। অনেকেই আবার পানিতে ছড়িয়ে থাকা কাটা ধানগুলো একত্র করছে। মাড়াই করছে বিভিন্ন পন্থায়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধান পানিতে থাকায় গজিয়েছে চারাও।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১ লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার ও বাসাইলের নীচু এলাকায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও বাতাসের কারণে হেলে পড়েছে ধান।
বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া মাঠের ধান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক। প্রতিনিয়ত ঝড়ো বৃষ্টি ও বাতাসে খেতের ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। তারমধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'র প্রভাবে ভারী বর্ষণ হওয়ায় খেতগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কাটা ধান মাড়াইয়ের পর ভেজা ধান শুকানো নিয়েও পড়তে হচ্ছে মহা বিড়ম্বনায়।
কৃৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ১ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তারমধ্যে ধানের চারা রোপন খরচ, হাল-চাষ খরচ, সার-কীটনাশক খরচ। এখন ধান কাটার মৌসুম। এই সময়ে প্রতিটি শ্রমিকের মজুরি ১০০০ থেকে ১২০০টাকা। স্বাভাবিক সময়ে ছয়জন শ্রমিক ১ বিঘার জমির ধান কাটতে পারলেও খেতে পানি থাকায় দ্বিগুণ শ্রমিক লাগছে। এতে করে বর্তমান সময়ে ১ বিঘার জন্য শুধু কাটতেই শুধু খরচ হচ্ছে ১০ থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, পাকা ধান পানিতে ভাসছে নিচে হাবুডুবু খাচ্ছে। ১ হাজার টাকাতেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুইদিনের বৃষ্টির পানিতে ধান তলিয়ে গেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া একজন শ্রমিক দিনে ১ মণ ধানও কাটতেও পারছে না।
কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, গত দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের ধানগুলো পানিতে ডুবে গেছে। ঈদের আগে শুকনো ছিল জমি। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে পাকা ধান শুয়ে পড়েছে। এতে করে ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে। আবার পানি থাকায় কেউ কামলাও (দিনমজুর) দিতে চাচ্ছে না। তাই নিজেই কাটতেছি দুই দিন ধরে। তবে ধান কাটতে যত না কষ্ট তার চেয়ে বেশি কষ্ট উঁচু স্থানে তুলতে। সরকার যদি আমাদের কৃষকদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতো তাহলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যেত।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহ্সানুল বাসার বলেন, গত দুই দিনে ঘূর্ণিঝড় অশনিতে কিছু কিছু উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের বোরো ধানের জমিতে পানি প্রবেশ ও পানিতে তলিয়ে গেলেও পাকা ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৩০ শতাংশ জমির পাকা ধান কাটা হয়েছে। ১২টি উপজেলায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে ১৫০টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। আগামী দেড় থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি।
সূত্র: আরটিভি