শিরোনাম
প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে মধ্যপ্রাচ্যগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভাড়া ৫ হাজার টাকা কমানো হচ্ছে।
একই সঙ্গে কর্মীদের চাপ থাকলে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা এবং টিকিট সিন্ডিকেটে জড়িত ট্রাভেল এজেন্সি শনাক্ত করতে বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কাজ করবে।
মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশকিছু দেশে যাতায়াতকারী ফ্লাইট ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে এক সভা হয়। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ট্রাভেল এজেন্সি, বায়রা, বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তারা অংশ নেন। ওই সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভার সূত্রে জানা যায়, মোট ৪টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-প্রবাসী কর্মীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে ৫ হাজার টাকা কম মূল্যে টিকিট কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে কর্মীদের টিকিট কাটার সময় বিএমইটির স্মার্ট কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।
এছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরে রানওয়ে উন্নয়নের জন্য রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় স্পেশাল সুবিধা দিয়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইট চালানো হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সমন্বয় করে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি যাতে অনেক টিকিট অগ্রিম বুকিং দিয়ে পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে, এ ব্যাপারে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যুগান্তরকে বলেন, বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীদের দুর্ভোগ লাগবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের বিমান ভাড়া ৫ হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঈদের আগেই এটি কার্যকর হবে।
সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, সম্প্রতি ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে গমনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিটের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের অভিবাসন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি টিকিটের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কর্মীদের বিদেশে যেতে বিলম্বিত হওয়ায় বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যাহত হচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মাহাবুব বলেন, ফ্লাইটের তুলনায় সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী কর্মী যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন পর ওমরাহ ভিসা চালু হওয়ায় সৌদি আরবসহ অন্য দেশে বিমানে যাত্রীদের চাপ প্রায় আট গুণ বেড়েছে। পক্ষান্তরে রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে উন্নয়নের কাজ চলায় এ সময় বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা কমে গেছে। এতেও টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি বেশি পরিমাণে বিমান টিকিট অগ্রিম বুকিং করে পরবর্তী সময়ে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করায় যাত্রীদের অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট ক্রয় করতে হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিমান ভাড়া কমাতে অন্য বিমান সংস্থা যাতে সহজেই ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে, সেজন্য ওপেন স্কাই ঘোষণা করা দরকার।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, করোনার কারণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রীবাহী বিমানে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন খালি রাখতে হয়। তাছাড়া জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং ফিরতি ফ্লাইটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী না পাওয়ায় টিকিটের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিমানের টিকিটের মূল্য শুধু দূরত্বের ওপর নয়, আরও ১৩টি ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। তবে প্রবাসী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে বিমান ভাড়া ৬৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে বিদেশি এয়ারলাইন্সে বিমান ভাড়া ১ লাখ টাকারও বেশি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন সদস্য জানান, বিমান ভাড়া নিয়ন্ত্রণের আইনগত এখতিয়ার বেবিচকের নেই। টিকিটের মূল্য একটি আন্তর্জাতিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। তাছাড়া দেরিতে টিকিট সংগ্রহ করায় উচ্চমূল্যে টিকিট ক্রয় করতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের অগ্রিম তালিকা প্রদান করলে চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য কমে আসবে। এছাড়া বিএমইটির স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে বাংলাদেশ বিমান টিকিটের মূল্যছাড় দেওয়া উচিত।’
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহীদুল আলম বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করা যেতে পারে।
সূত্র: যুগান্তর